১৫ বছর পর ২৪তম বিসিএস ভাইভার ডাক পেলেন আশরাফুল

২৪তম বিসিএসে অংশ নিয়েছিলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাতাবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. আশরাফুল ইসলাম। ১৫ বছর পর অবশেষে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) থেকে মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) ডাক পেয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার পাওয়া পিএসসির চিঠিতে আগামী ২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে আগারগাঁও পিএসসি কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

২৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার প্রথম পছন্দ দিয়ে আবেদন করেছিলেন আশরাফুল। এ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা বর্তমানে সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব। কেউ কেউ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এই বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা এখন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।

মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্যও ১৫ বছর ধরে আইনি লড়াই করতে হয়েছে আশরাফুলকে। কী ছিল সে ঘটনা? জানতে চাইলে গত রাতে তিনি বলেন, ২০০১ সালে ২৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা দিতে যান পিএসসিতে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তিনি ‘কোটায়’ আবেদন করেছিলেন। তার কাছে ছিল তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ। ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান পিএসসির তৎকালীন সদস্য অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী তার ভাইভা না নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেন। তিনি তাকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় স্বাক্ষরিত সনদ না থাকার জন্য ভর্ৎসনা করেন। আশরাফুল ইসলাম বোর্ডকে জানান, এ মন্ত্রণালয় সদ্যই গঠিত হয়েছে, তারা এখনও গুছিয়ে উঠতে পারেনি এবং তিনি তার বাবার সনদ মন্ত্রণালয় থেকে উত্তোলনের আগেই তার ভাইভার তারিখ এসে পড়েছে। তবু তাকে বোর্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়। আশরাফুল জানান, সে সময়ে প্রায় চার মাস ধরে ভাইভা চললেও তিনি বার বার আবেদন করেও ভাইভা নেওয়াতে পারেননি।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আশরাফুল ২০১১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তার ভাইভা নেওয়ার জন্য। শুনানি শেষে আদালত তার ভাইভা ৩০ দিনের মধ্যে নেওয়ার নির্দেশ দেন পিএসসিকে। পিএসসি ২০১৫ সালে এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে। রিভিউ শুনানি শেষে আদালত আগের রায়ই বহাল রাখেন। এরপর গতকাল পিএসসি তাকে ভাইভা নিতে চিঠি দিয়েছে।

আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় স্নাতকোত্তর করেছেন। বর্তমানে নাটক পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, অতীতে এভাবে ১৫ বছর পর ভাইভা নেওয়ার আর কোনো রেকর্ড তার জানা নেই।

গতকাল তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এ এক অন্যরকম অনুভূতি, আমার জীবনে এক বিশেষ দিন। ১৫ বছর পর আজ বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষার কার্ড পেলাম। ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করেছিলাম ২০০১ সালে। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করেও সে সময়ে ভাইভা দিতে পারিনি। এর পর আইনি লড়াইয়ে কেটে গেছে ১৫টি বছর। ফিরে এসেছে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। আগামী জানুয়ারিতে আমার ভাইভা পরীক্ষা নেবে পিএসসি। এত দীর্ঘ সময় পর দেশে কিংবা বিদেশে আর কারও ভাইভা পরীক্ষা দেওয়ার এমন নজির আছে কি-না আমার জানা নেই। তবে এটা ঠিক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় বর্তমান না থাকলে এ লড়াইয়ে জেতা সম্ভব ছিল না।

ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ধন্যবাদ মহামান্য হাইকোর্ট এবং সর্বোপরি পিএসসিতে এতদিন পরে হলেও আমাকে ভাইভা পরীক্ষায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আমি গর্ব করে বলি, আমার পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’

সূত্র: দৈনিক শিক্ষা