৫০ নম্বরের পরীক্ষায় ৮৮ পেয়ে ফার্স্ট !

WwRশারীরিক শিক্ষা বিষয়ে মোট নম্বর ৫০ হলেও ৮৮ দিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রকে।ষষ্ঠ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় বেশি নম্বর দিয়ে এই ছাত্রটিকে সপ্তম শ্রেণিতে প্রথম বানানো হয়েছে।

রহস্যের এখানেই শেষ নয়, ষষ্ঠ অপর এক ছাত্রকে একই বিষয়ে ৯৬ নম্বর দিয়ে তাকে ঘোষণা করা হয়েছে ৭ম শ্রেণির দ্বিতীয়।

এই অস্বাভাবিক নম্বর দেওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার তাদের ওই বিষয়ের ‘গ্রেড’ করে দিয়েছে ‘এফ’ অর্থাৎ অকৃতকার্য। তারপরও এই দুই ছাত্রকেই প্রথম ও দ্বিতীয় করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য পাবলিক পরীক্ষায় খাতা না দেখেই নম্বর দেওয়া এবং অন্যদের দিয়ে দেখানোর সংস্কৃতি চালু রয়েছে গত কয়েকবছর ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার স্কুল ফাইনালেও একই ঘটনা ধরা পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখে এই ভুল ধরলেও প্রথমে তাদের পাত্তা দেওয়া হয়নি। তাদের অভিভাবকেরা বলতে এসেছেন। শিক্ষকেরা তাঁদের নাজেহাল করেছেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁদের সাইটটি নামিয়ে রাখেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করার পর গতকাল শনিবার স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল সংশোধন করছে বলে জানিয়েছে। এখন তারা বলছে, অনলাইনে প্রথমবারের মতো ফল প্রকাশ করতে গিয়ে অনভিজ্ঞতার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, দুই ভাগে নেওয়া পরীক্ষায় ১০০ নম্বর করে সাতটি বিষয় রয়েছে। আর ৫০ নম্বর করে আছে ছয়টি বিষয়। এরই একটি হচ্ছে শারীরিক শিক্ষা। যে ছাত্রকে প্রথম করা হয়েছে, তাকে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ৫০ নম্বরের মধ্যে দেওয়া হয়েছে ৮৮। এতে ৫০ নম্বরের ছয় পরীক্ষায় মোট ৩০০ নম্বরের মধ্যে সে ৩২১ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। একটি বিষয়ে ‘এফ’ গ্রেড হওয়ার কারণে তার গড় গ্রেড ‘এ প্লাস’ হয়নি। হয়েছে ‘এ’ গ্রেড। এসব দেখেও তাকেই করা হয়েছে সপ্তম শ্রেণির প্রথম।

যে ছাত্রটিকে দ্বিতীয় করা হয়েছে, তাকে ৫০ নম্বরে দেওয়া হয়েছে ৯৬। এতে ৩০০ নম্বরে সে পেয়ে গেছে ৩২৮ দশমিক ৬ নম্বর। একটি বিষয়ে ‘এফ’ গ্রেড থাকার কারণে তার গড় গ্রেড হয়েছে ‘এ’।

৩১ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের ফলাফল ঘোষণার সময় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে সমাবেশ থেকে সামনে ডেকে নিয়ে তাদের হাতে ফলাফল কার্ড তুলে দেওয়া হয়। অন্যদের পরে দেওয়া হয়।

ওই দিনই অনলাইনে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিদ্যালয়ের ফলাফলের এই ভুল ধরে ফেলে। এই দুজনের ফলাফল ছাড়াও আরও কয়েকজনের এই জাতীয় ভুল রয়েছে। তাদের হিসাবে প্রকৃতপক্ষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হবে অন্য ছাত্ররা।

অভিভাবকেরা বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে তিনি শ্রেণি শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। শ্রেণি শিক্ষক এই অভিযোগ শুনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটি নামিয়ে রাখা হয়। তারপর শিক্ষকেরা অভিভাবকদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন—তাঁদের কাছে কী প্রমাণ আছে যে ফলাফলে ভুল হয়েছে?

একজন অভিভাবক ফলাফল প্রকাশের দিনই অনলাইন থেকে ফলাফলের পাতাটি ডাউনলোড করে রেখেছিলেন। তিনি গতকাল প্রমাণস্বরূপ তা জমা দেওয়ার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ফলাফল সংশোধনের ঘোষণা দেন।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, তাঁরা প্রথমবারের মতো অনলাইনে ফলাফল প্রকাশ করেছেন। তাই ভুল হয়েছে। সংশোধন করে দেবেন।

সূত্র: দৈনিক শিক্ষা