১৫ হাজার পুল শিক্ষকের স্থায়ী নিয়োগ অনিশ্চিত

হাইকোর্টের রায় পক্ষে থাকলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আড়াই হাজার পুল শিক্ষকের স্থায়ী নিয়োগ এখনো ঝুলে আছে। পেশাগত জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন আরো ১৩ হাজার ৫০০ পুল শিক্ষক।

তাদের অভিযোগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় একদিকে তাদের নিয়োগের আশ্বাস দিচ্ছে, আবার একের পর এক অজুহাত দেখাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুল শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের পক্ষে থাকা হাইকোর্ট ও চেম্বার জজ আদালতের রায়ের কাগজপত্র মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন তারা। এই সময় মন্ত্রী তাদের বলেন, কিছুদিন আগে ২৮ হাজার প্যানেল শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন আবার ১৫ হাজার পুল শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয়। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা না বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।

মামলার বিবরণে থাকা তথ্যমতে, ২০১১ সালের ৪ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। এর জন্যে ১১ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। এতে লিখিত পরীক্ষায় ৪৪ হাজারের বেশি প্রার্থী পাস করে। মৌখিক পরীক্ষার পর নেয়া হয় ২৭ হাজার ৭২০ জনকে। তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হয় ১২ হাজার ৭০১ জনকে। বাকি ১৫ হাজার ১৯ জনকে রাখা হয় পুলভুক্ত হিসেবে।

শিক্ষক পুল গঠনের জন্য ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে পরিপত্র জারি করে এবং দুই বছর পর ‘শিক্ষক পুল’ নীতিমালা করে। ওই নীতিমালায় ছয় মাসের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীদের সইও নেওয়া হয়।

কিন্তু উত্তীর্ণ প্রার্থীদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবারও বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৫২ জন আবেদনকারী ওই বছর রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর হাই কোর্ট রুল দেয় এবং নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে।

পরে একই বিষয়ে আরও ৭১টি রিট আবেদন ও রুল হয়। এসব রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি রিটাকারীদের পক্ষে রায় দেয় উচ্চ আদালত।

রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, পুলভুক্তদের মধ্যে রিট আবেদনকারী আড়াই হাজার নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের নিয়োগের আগে নতুন করে অন্যদের নিয়োগ না দিতে বলেছে।

তিনি আরো জানান, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজের আদালতে আপিল (সিএমপি) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে চেম্বার জজও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

এদিকে উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেয়েছে ২৩ জুন। এর অনুলিপি নিয়ে পুল শিক্ষক প্রতিধিরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং সচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। স্থায়ী নিয়োগের পক্ষে তারা সুপারিশ করেন। তবে তাতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের বিষয়টি যুক্ত করে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব।

পুল শিক্ষক প্রতিনিধি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক বার মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেছিলেন, উচ্চ আদালতের কাগজ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় আসার পরও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।’

একাধিক পুল শিক্ষক বলেন, এই চাকরি নিয়ে অশান্তির মধ্যে আছেন। সরকারি, আধা সরকারি সবার জন্যে নতুন বেতন কাঠামো করা হয়েছে। এর সুবিধা প্রাথমিকের স্থায়ী শিক্ষকরাও পাচ্ছেন। কিন্তু পুল শিক্ষকদের বেতন আগের সেই ছয় হাজার টাকাই রয়ে গেছে। তারা কোনো ছুটিও পান না। এক দিন ছুটি নিলে ২০০ টাকা কেটে নেয়া হয়।

পুল শিক্ষক এইচএম ফিরোজ বলেন, ‘আমরা আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সমস্যা সমাধানে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। অসহায় পুল শিক্ষদের স্থায়ী নিয়োগে তিনি ঘোষণা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।’

হাইকোর্টের রায়ের পরও পুল শিক্ষকদের নিয়োগে সমস্যা কোথায়- জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হুমায়ুন খালিদ বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের প্রতি আমাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। এ বিষয়ে আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছি। তাদের পরার্শমতো ব্যবস্থা নিবো।’