হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর ভাগ্য খুলছে শীঘ্রই!

সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীনে বিসিএস, নন-ক্যাডার, নার্সসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নেয়া হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর ভাগ্য খুলছে শীঘ্রই। আসছে একের পর এক নিয়োগ ও পরীক্ষা। দুই মাসের মধ্যেই নিয়োগ পাচ্ছেন ১৫ হাজার বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডার পদের চাকরি প্রার্থী।

চলতি মাসেই ৩৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ ছাড়াও প্রকাশ করা হবে ৩৫ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল। ৩৬ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে আগামী ১ সেপ্টেম্বর। ৩৭ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হবে ৩০ সেপ্টম্বর।

একের পর এক পরীক্ষা ও নিয়োগের এ কার্যক্রম ঘিরে রীতিমতো বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে কমিশনে।গত দুদিন সরকারী কর্মকমিশনের কার্যক্রম পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে চাকরি প্রার্থীদের জন্য এমন সুসংবাদই পাওয়া গেছে। পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সফল করতে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন দিনরাত।

কমিশনের সদস্যসহ পরীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্তরা অফিস করছেন ছুটির দিনেও। সরাসরি সকল নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম মনিটরিং ছাড়াও নিজেই ভাইভা বোর্ডে থাকছেন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের লক্ষ্যে অন্য সদস্যদের মতো ভাইভা নিচ্ছেন চেয়ারম্যান।

এর আগে বিসিএস ক্যাডার নিয়োগের ভাইভা বোর্ডে চেয়ারম্যান থাকার নজির থাকলেও দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগ পরীক্ষায় এভাবে চেয়ারম্যানের অংশগ্রহণ দেখা যায়নি কখনও। বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে অন্য সদস্য ও কর্মকর্তারা বলছেন, এতে কমিশনের কর্মকর্তাদের কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর।

মঙ্গলবার সকালে কমিশনে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান ১০টি ভাইভা বোর্ডের একটিতে ভাইভা নিচ্ছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে চাকরি র্প্র্থাীদের। পাশেই চোখে পড়ল প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ছোঁয়া। নিজে ভাইভা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ভাইভা বোর্ডগুলোর কার্যক্রমও চেয়ারম্যান দেখছেন সিসি টিভির মাধ্যমে।

প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে নিজ কক্ষে বসেই চেয়ারম্যান এখন পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি শাখার কার্যক্রম। কথা বলে জানা গেল, কেবল এ পরীক্ষাই নয়। সুখবর আসছে আরও বেশ কিছু পরীক্ষায় অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক চাকরি প্রার্থীর জন্যই। ৩৪ তম বিসিএসে যারা ক্যাডার পদ পাননি তাদের জন্যও আছে সুখবর।

ওই বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরির সুযোগ আসছে প্রথমবারের মতো। যেখানে নিয়োগ পাবেন দুই হাজারেরও বেশি প্রার্থী। চলতি মাসেই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাবেন এক হাজার ২০০ জন।

সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন প্রায় ৬০০ জন, কর পরিদর্শকের চাকরি পাবেন ৩৫০ জন, নিয়োগ দেয়া হবে লেবার পরিদর্শক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এপিওসহ বিভিন্ন পদেও। এর আগে একই বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর পদে নিয়োগ দেয়া হয় ৪০৯ জনকে।

৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কাজ বহুলাংশে শেষ। তবে তার আগেই ৩৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের নিয়োগ দিতে পারলে অনেক মেধাবী সন্তান তার সুফল পাবেন। কারণ ৩৫তম বিসিএসের ফল প্রকাশ হলে আইন অনুসারে তার আগের বিসিএস থেকে আর নন-ক্যাডার পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবে না।

ফলে অনেকের সরকার চাকরির বয়সও চলে যাবে। এ অবস্থায় দুটোর কাজই এগুচ্ছে ভালভাবে। চলতি মাসের মধ্যেই ৩৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ শেষ করে ৩৫তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সদস্য।

এ মাসের শেষ সপ্তাহেই চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে পারেন ৩৫তম বিসিএসের মেধাবীরা। ৩৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ছয় হাজার ৮৮ চাকরিপ্রত্যাশী। যারা পরে মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হন।

৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৮০৩টি পদে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পিএসসি ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গতবছর ৬ মার্চ ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ চাকরিপ্রার্থী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন।

প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ ২০ হাজারের বেশি সরকারী চাকরিপ্রত্যাশী অংশ নেন লিখিত পরীক্ষায়। অপেক্ষার অবসান হচ্ছে ৩৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদেরও। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে লিখিত পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান।

তিনি জানান, চাকরি প্রার্থীদের জন্য কমিশন কাজ করছে অত্যন্ত একাগ্রতার সঙ্গে। ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৩০ জন। বিভিন্ন ক্যাডারে দুই হাজার ১৮০ জনকে নিয়োগ দিতে ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি।এদিকে ৩৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির জন্য যারা আবেদন করে অপেক্ষা করছেন তাদের অপেক্ষারও অবসান হচ্ছে।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ৩৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। কমিশনের কর্মকর্তারা তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, ৪৬৫ টি সাধারণ ক্যাডারসহ এক হাজার ২২৬টি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে ৩৭ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ এবং পুলিশে ১০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।মঙ্গলবার কমিশনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত চারটি বিসিএসের নিয়োগ ও ১০ হাজার নার্স নিয়োগের কাজ এক সঙ্গে চললেও পুরো প্রক্রিয়া এগুচ্ছে দ্রুত গতিতেই। নার্স নিয়োগের কাজ দ্রুত শেষ করতে ভাইভা নিচ্ছে ১০টি বোর্ড।

চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন, কাজের চাপ অনেক তবে সকলেই অত্যন্ত সুন্দরভাবে দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। সদস্যরা সরকারী ছুটির দিনেও অফিস করছেন। ফল প্রকাশে দেরি হওয়া সম্পর্কে অনেকের অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলছিলেন, আসলে কি, দেখে মনে হয় বিসিএস শুধু ২৭টি ক্যাডারের একটি বিসিএস পরীক্ষাই নেয়। কিন্তু এই পরীক্ষা নিতেই যে কত ধরনের পরীক্ষা ও প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণেনর মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা অনেকেই ভাবেন না।

শুধু শিক্ষা ক্যাডারেই ৭৯ রকমের প্রশ্ন করতে হয়। এসব পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণে সময় লাগে। ক্যাডার ছাড়াও নন-ক্যাডারের অনেক পরীক্ষা নিতে হয়। এখন প্রতিদিন ৪০০ নার্স নিয়োগের সাক্ষাতকার নিতে হচ্ছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।

কথা হচ্ছিল কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, অন্যান্য পরীক্ষা ও ফল দ্রুত হয় না বলে অনেকেই হয়ত মনে করেন কাজ হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এক সময় কমিশনের পরীক্ষা যেমন কম ছিল তেমনি প্রার্থীও কম ছিল।