‘স্যারদের কাছে জীবনের চেয়ে নিয়মই বড়’

‘রোববার দুপুর ১২টা থেকে আমরা না খেয়ে বিভাগের সামনে পড়ে আছি। ছেলেমেয়ে সবাই রাতে এখানেই অবস্থান করেছি। আমরা সবাই কত কান্নাকাটি করলাম। স্যারদের হাতে-পায়ে ধরলাম। কিন্তু তারপরও আমাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হলো না। আমাদের জীবনের চেয়ে, চোখের পানির চেয়ে স্যারদের কাছে নিয়মই বড়।’

1455535462

প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়ায় এভাবেই নিজের আহাজারি কথা জানাচ্ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ মাহাবুর রহমান। ৬০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকায় (ডিসকলিজিয়েট) মহাবুর রহমানের মতো ওই বর্ষের আরো ৫৬ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। আজ সোমবার সকালে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে একই কারণে আগামী ১৫ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না দ্বিতীয় বর্ষের ১৪০ জনের মধ্যে ৪৫ জন শিক্ষার্থী।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে গত রোবাবার দুপুর ১২টা থেকে রাবির আইন বিভাগের সামনে ‘আমরণ অনশন’ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছেন প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ডিসকলিজিয়েট শিক্ষার্থীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

এতে অনশনরত তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থরা হলেন আফিফা অন্বেষা, সুমাইয়া খন্দকার ও নাজমুল শিশির। এঁদের মধ্যে আফিফা ও সুমাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং নাজমুলকে বিভাগের সামনেই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর বলেন, ‘ক্লাস চলার সময় আমার অ্যাপেনডিসাইটিসের অপারেশন করতে হয়। পরে সেখানে ঘা হয়ে যায়। যার জন্য আমাকে আরো কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হয়। এ সময় আমি বিভাগে তিন মাসের ছুটি চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। তবে শিক্ষকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাকে পরীক্ষা দিতে দিবেন। কিন্তু এখন দিচ্ছেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকরা আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন আন্দোলনের ফল ভালো হবে না। আমাদের ক্লাসে উপস্থিতির জন্য পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষকরাই নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। হঠাৎ কোনোদিন ক্লাস নিতে এসে চার থেকে পাঁচটি এটেনডেন্স দিয়ে দেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রথম বর্ষের একটা পরীক্ষা হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, এটা বিভাগের একটা সমস্যা। তাই এই সমস্যাটা কীভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনার জন্য আগামীকাল অ্যাকাডেমিক কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৭৫ শতাংশ ক্লাশে উপস্থিত থাকতে হয়। বিশেষ কারণে তা সম্ভব না হলে, জরিমানা সাপেক্ষে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রেও ৬০ শতাংশ উপস্থিতি থাকতে হবে।

সূত্র: এনটিভি বিডি ডট কম