সময়মতো বই পাবে না পৌনে তিন কোটি শিক্ষার্থী

প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে পৌনে তিন কোটি শিক্ষার্থী। কারণ বই ছাপা নিয়ে জটিলতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে আগামী শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। আর এতে করে ম্লান হতে পারে কয়েক বছর ধরে সাফল্যের সাথে যথাসময়ে কোটি শিক্ষার্থীর হাতে হাতে বই তুলে দেয়ার গৌরব। ফিরে আসবে বই বিতরণ নিয়ে অতীতের কেলেঙ্কারির চিত্র।

new-book-festival

এ দিকে বিশ্বব্যাংকের শর্তযুক্ত চিঠি গ্রহণ প্রত্যাখ্যানের পর গতকাল এনসিটিবি কর্তৃক ডাকযোগে চিঠি পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এনসিটিবি চিঠি পাঠানো থেকে বিরত রয়েছে। তারা এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সব পক্ষকে ম্যানেজ করতে। কিন্তু পরিস্থিতি যে পর্যায়ে চলে গেছে তাতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা। কারণ যে সময় হাতে আছে তাতে যথাসময়ে সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়া ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।

এ দিকে মুদ্রণশিল্প মালিকেরা জানিয়েছেন, তাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে এখনো হয়তো যথাসময়ে বই ছাপার কাজ শেষ করা সম্ভব। কিন্তু একমুহূর্ত বিলম্ব হলে সঙ্কট অবধারিত। এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে তাতে যথাসময়ে বই ছাপা এবং বিতরণে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। কারণ পাঠ্যবইয়ের অভাবে তারা যথাসময়ে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করতে পারবে না।

চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে দুই কোটি ৪৩ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য গত বছর মোট ১১ কোটি ৪৩ লাখ পাঠ্যবই ছাপা এবং বিতরণ করা হয়। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে এর চেয়েও কিছু বেশি শিক্ষার্থী ধরে সাড়ে ১১ কোটি বই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, গত বছর ২০ জুলাই মুদ্রণশিল্প মালিকদের কাজ পাওয়ার খবর জানিয়ে চিঠি বা নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দেয় এনসিটিবি। নিয়ম অনুযায়ী এর সাত দিনের মাথায় তাদের কার্যাদেশ দেয়া হয়। আগস্ট মাসে পুরোদমে শুরু হয়ে যায় বই ছাপার কাজ। কিন্তু এ বছর এখনো কাজ পাওয়ার বিষয়ে অবহিত করে কোনো চিঠিই দিতে পারেনি এনসিটিবি।

কার্যাদেশ পাওয়ার পর ১২৬ দিনের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ করার নিয়ম। সে অনুযায়ী আগস্ট মাসেও যদি কার্যাদেশ দেয়া না যায় তাহলে বই ছাপার কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর মাস ছাড়িয়ে যাবে। প্রতি বছর এমন সময় কার্যাদেশ দেয়া হয় মুদ্রণশিল্প মালিকদের, যাতে করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ করতে পারেন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে বই পৌঁছাতে পারেন।

এখনো কার্যাদেশ না পাওয়া বিষয়ে মুদ্রণশিল্প মালিকেরা জানান, যেদিন কার্যাদেশ দেবে সেদিন থেকে আমাদের দিন গণনা শুরু হবে। সরকার যদি ১ জানুয়ারি বই বিতরণ উৎসব করতে চায় সেক্ষেত্রে আর একদিনও দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। আর যদি দেরি করে এবং নির্ধারিত সময়ে বই ছাপার কাজ শেষ করতে চায় তাহলে মুদ্রণশিল্প মালিকেরা কম সময় পাবে এবং তাদের ওপর চাপ পড়বে।

এবার প্রাথমিকের সাড়ে ১১ কোটি বই ছাপার জন্য ৯৮টি লটের সবগুলোতে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান। গত ২৯ এপ্রিল প্রাথমিকের সাড়ে ১১ কোটি বই ছাপার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে দরপত্র মূল্যায়নে সবগুলো লটে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়। পাঁচ বছর ধরে ভারত পাঠ্যবই ছাপার কাজ পেলেও এবার তারা একটি লটেও সর্বনিম্ন দরদাতা হতে পারেনি।

কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ পাওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে কার্যাদেশ পাওয়ার জন্য। কারণ এনসিটিবি প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকের জন্য প্রচলিত বাজারদর অনুযায়ী ছাপার খরচ নির্ধারণ করে ৩৩০ কোটি টাকা। কিন্তু বাংলাদেশী দরদাতারা ১০৯ কোটি টাকা কমে মাত্র ২২১ কোটি টাকায় বই ছাপার কাজ করে দিতে রাজি হয়। এতে প্রশ্ন তোলা হয় এত কম দামে তারা মানসম্মত বই ছাপতে পারবে কি না। এ পরিপ্রেক্ষিতে বইয়ের মান নিশ্চিত করার জন্য দরপত্রের শর্তের বাইরে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নতুন শর্ত আরোপ করা হয় বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে। এর তীব্র বিরোধিতা করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন তারা আইনি প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।