শীর্ষে নর্থ সাউথ, দ্বিতীয় ব্র্যাক

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে করা গবেষণায় র‌্যাংকিংয়ে প্রথম হয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, দ্বিতীয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃতীয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। ঢাকা ট্রিবিউন-বাংলা ট্রিবিউনের যৌথ উদ্যোগে র‌্যাংকিং নির্ণয়বিষয়ক এ গবেষণাটি পরিচালনা করে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড।

শনিবার র‌্যাংকিংয়ের ফলাফল বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে এই দুই প্রতিষ্ঠানের করা র‌্যাংকিংয়ে প্রথম হয়েছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।

দেশে বর্তমানে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ১০৪টি। তবে র‌্যাংকিং নির্ণয়বিষয়ক গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে ৩৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে।

বস্তুগত ও ধারণাগত (ফ্যাকচুয়াল ও পারসেপচুয়াল) স্কোরের সমন্বয়ে চূড়ান্ত র‌্যাংকিং করা হয়। বস্তুগত স্কোর নির্ণয় করা হয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা এবং গবেষণায় খরচ ইত্যাদির ভিত্তিতে। ধারণাগত স্কোরগুলো নেয়া হয়েছে একাডেমিক (ডিন, বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক, রেজিস্ট্রার) ও চাকরিদাতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সূচকে স্কোর দিয়েছে।

এবারের র‌্যাংকিংয়ে চতুর্থ হয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, পঞ্চম আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সপ্তম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, অষ্টম ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নবম ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এবং দশম দ্য ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক।

এ বছর নর্থ সাউথ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত স্কোরে পার্থক্য খুব কম। এই ইউনিভার্সিটিগুলো গত বছরের র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দশের মধ্যেই ছিল।

এ ছাড়া ১১ থেকে ২০তম হয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

ঢাকা ট্রিবিউন-বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো ইউনিভার্সিটিগুলোকে একটি র‌্যাংকিংয়ের আওতায় আনা। ৬৫টি ইউনিভার্সিটিকে এই গবেষণার আওতাভুক্ত করা হয়নি। এর মধ্যে ৪১টি ইউনিভার্সিটিতে এখনও কোনো সমাবর্তন হয়নি, ১২টি ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র ভর্তি-প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, ৮টি ইউনিভার্সিটিতে এখনও শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু হয়নি, ৩টি ইউনিভার্সিটি বিশেষায়িত ইউনিভার্সিটি হিসেবে পরিচিত এবং একটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজারের নিচে থাকায় এসব ইউনিভার্সিটিকে বাদ দিয়ে বাকি ৩৬টির মধ্যে র‌্যাংকিংয়ের গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

বলা হয়েছে, গবেষণা ব্যয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। তাদের বাৎসরিক গবেষণায় ব্যয় ৪৮.২৩ কোটি টাকা। যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ব্যয় করেছে ৭.৬৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ব্যয় করেছে ৫ দশমিক ৪ কোটি টাকা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যয় ৪ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা। শীর্ষ পাঁচের পাঁচ নম্বরে থাকা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির গবেষণা ব্যয় ৩ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা।

গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যা ৫৩৪টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রকাশনার সংখ্যা ৩২৩টি। তৃতীয় স্থানে থাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রের সংখ্যা ২৯৩টি। এই তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, যাদের গবেষণাপত্রের সংখ্যা যথাক্রমে ২৭৫ ও ২৪৯টি।

শিক্ষার্থী সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। তাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০ হাজার ২৫ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, তাদের রয়েছে ১৮ হাজার ২৯০ জন শিক্ষার্থী।

এ ছাড়া শিক্ষার্থী সংখ্যায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে রয়েছে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১ হাজার ৯৩৫ জন, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, শিক্ষার্থীসংখ্যা ১০ হাজার ২৭৯ জন ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, শিক্ষার্থীসংখ্যা-৯ হাজার ৭৬২ জন।

অন্যদিকে পূর্ণকালীন শিক্ষকে সেরা পাঁচের মধ্যে থাকতে পারেনি কয়েকটি শীর্ষ ইউনিভার্সিটি। এই তালিকায় শীর্ষে আছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির পূর্ণকালীন শিক্ষকের হার ৯৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে পূর্ণকালীন শিক্ষকের হার ৯০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে থাকা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এই হার ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ এবং এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষকের হার ৮১ দশমিক ১২ শতাংশ।

শিক্ষকরা ছয়টি মানদণ্ডে এই পাঁচটি ইউনিভার্সিটিকেই সেরা পাঁচে রেখেছেন। এর মধ্যে শিক্ষা ও কাজের পরিবেশের মানদণ্ডে শীর্ষ পাঁচে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।

সার্বিক সুখ্যাতির মানদণ্ডে বিচারে পাঁচটি ইউনিভার্সিটি হচ্ছে যথাক্রমে, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, আহসানউল্লাহ, ইস্ট-ওয়েস্ট ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি। অবকাঠামোর বিচারেও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সেরা। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিভার্সিটি হচ্ছে যথাক্রমে আহসানউল্লাহ, ইস্ট ওয়েস্ট ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি। এই মানদণ্ডে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পাঁচ।

পাশ করা মানের দিক থেকে দেশের সেরা পাঁচটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি হচ্ছে যথাক্রমে নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, আহছানউল্লাহ, ইস্ট ওয়েস্ট, ইন্ডিপেনডেন্ট এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

অন্যদিকে, কেমন ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে এই মানদণ্ডে শীর্ষ পাঁচ ইউনিভার্সিটি হচ্ছে নর্থ সাউথ, আহছানউল্লাহ, ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, ইন্ডিপেনডেন্ট ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। চাকরিদাতারা সবকটি মানদণ্ডে নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, আহসানউল্লাহ ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিকে শীর্ষ পাঁচে রেখেছেন।

ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ের কমিটির সদস্যরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ আবদুল্লাহ জামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিসটিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের অধ্যাপক ড. আজমেরি খান, ওআরজি কোয়েস্টেও চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনজুরুল হক, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, প্রথম আলোর হেড অব রিপোর্টার শরিফুজ্জামান পিন্টু, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী সাঈদ আহমেদ।