শিক্ষার্থীদের কোন আগ্রহ নেই ৩০০ কলেজে

প্রয়োজন না থাকলেও একের পর এক কলেজ অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এখনো প্রতি মাসে তিন-চারটি করে কলেজের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এসব কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত- এত দিন সে বিষয়টি প্রকাশ্যে না এলেও এবার অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চালু হওয়ায় তা স্পষ্ট হয়েছে। নিজেদের অনুমোদন দেওয়া কলেজ নিয়ে তাই বিপাকে পড়েছে ঢাকা বোর্ড। কারণ অন্তত ৩০০টি কলেজ আছে, যেগুলোতে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই।

x031128b7b55f6354dc96dc8b683983a1-6.jpg.pagespeed.ic.qquA4V4lPS

এমন কলেজও আছে, যেখানে এবার অনলাইন ও এসএমএস আবেদনে মাত্র চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে রেখেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, গত রবিবার শেষ হয়েছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন। এবার ঢাকা বোর্ডে অনলাইনে ও এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করেছে তিন লাখ ৭২ হাজার ৮৩৪ জন। অথচ ঢাকা বোর্ডের এক হাজার ২০৫টি কলেজে আসন রয়েছে প্রায় চার লাখ ৬০ হাজার। সেই হিসাবে শুধু ঢাকা বোর্ডেই শূন্য থাকবে ৮৭ হাজার ১৬৬টি আসন। শূন্য আসনের বেশির ভাগই নতুন অনুমোদন পাওয়া প্রায় ৩০০ কলেজের।

আর সারা দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১২ লাখ ৬৮ হাজার পরীক্ষার্থী পাস করলেও এইচএসসি ও সমমানে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থী। সারা দেশের তিন হাজার ৭৫৭টি কলেজে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ আসন রয়েছে। সেই হিসাবে এবার একাদশ শ্রেণিতে প্রায় আড়াই লাখ আসন শূন্য থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সরকারি কলেজগুলো। কলেজ অনুমোদন নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি কলেজে প্রতি শিক্ষাবর্ষে প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। নইলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ওই কলেজের অনুমোদন বা স্বীকৃতি বাতিল করতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষই স্বীকার করছে, এবার ৩০০টি কলেজ তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তবে যাদের ডিগ্রি বা অনার্স কোর্স চালু রয়েছে, তারা পার পেলেও এক-তৃতীয়াংশ কলেজের অনুমোদনও বাতিল হয়ে যেতে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. আশফাকুস সালেহীন বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী অনেক কলেজই তাদের আসনসংখ্যা পূর্ণ করতে পারছে না। তবে এবার যেহেতু প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চালু হয়েছে, তাই এসব কলেজে কিভাবে শিক্ষার্থী বাড়ানো যায় সে ব্যবস্থা নিতে বলব। পরবর্তী বছরও এসব কলেজে শিক্ষার্থী না বাড়লে সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এবার গ্রামের কলেজগুলোই কম শিক্ষার্থী পাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। যত্রতত্র আমাদের আর কলেজের খুব একটা প্রয়োজন নেই। তবে দুর্গম এলাকাগুলোতে শিক্ষার্থীসংখ্যা কম হলেও অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।’

ঢাকা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তিন ধরনের কলেজ অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলো হলো- স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত কলেজ, শুধু কলেজ এবং যারা ৩০০ টাকার বন্ডে লিখিত দিয়ে জানায় কখনোই তারা এমপিওভুক্তি নেবে না, এমন কলেজ। যারা এমপিওভুক্তি নেবে না সেসব কলেজ পরিদর্শনের মাধ্যমে অনুমোদন দেয় ঢাকা বোর্ড। বাকি কলেজগুলোর ক্ষেত্রে অনুমোদনের জন্য প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তাদের নির্দেশনার পরই বোর্ড অনুমোদন দেয়। দেখা যায়, বেশির ভাগ কলেজ অনুমোদনেই রাজনৈতিক সুপারিশ থাকে। একই এলাকায় একটি কলেজ থাকার পরও আরেকটি কলেজের অনুমোদন চাওয়া হয়। সংসদ সদস্যরা ডিও লেটার পাঠান। তাই প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও আমাদের অনুমোদন দিতে হয়।’