শিক্ষক শূন্য পদ ১৫হাজার ১২১টি, অাবেদন ১৪ লাখ

পিএসসির আদলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়েছে ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ’ (এনটিআরসিএ)। সারাদেশের ছয় হাজার ৫৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার ১২১টি শূন্যপদের বিপরীতে প্রায় ১৪ লাখ এনটিআরসিএ সনদধারী প্রার্থী শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। দৈনিক সংবাদে আজ ১ অক্টোবর প্রকাশিত এক খবরে এ  তথ্য জানা গেছে।

এই বেহাল অবস্থার মধ্যেই বর্তমানে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশের অপেক্ষমাণ রয়েছে। এনটিআরসিএ সনদ অর্জনের জন্য গত ১২ ও ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত ১৩তম নিবন্ধন পরীক্ষায় মোট এক লাখ ২৭ হাজার ৯৪৮ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে রাজধানীর নায়েম ভবনে অবস্থিত এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কাজের নামে ইচ্ছেমতো সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অডিট আপত্তি উপেক্ষা করে বারবার অতিরিক্ত কাজের নামে সম্মানী ভাতা পুনর্নির্ধারণ করছে।

অভিযোগ রয়েছে, এনটিআরসিএ কর্তা-ব্যক্তিদের গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

আবার শূন্যপদের সংখ্যা বিবেচনায় না নিয়ে ঢালাওভাবে লাখ লাখ ব্যক্তিকে শিক্ষকতার যোগ্য ঘোষণা করায় এনটিআরসিএ সনদধারী প্রার্থীরা তীব্র হতাশায় ভুগছেন। শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেও তারা অস্বস্তিতে রয়েছেন।

জানা গেছে, এনটিআরসিএর নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষক নিয়োগের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সারাদেশের ৩০ হাজারের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে তাদের ই-রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে।

রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহে গত ৩০ জুন পর্যন্ত শূন্যপদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অনলাইনে (ই-রিকুইজিশন) প্রদানের জন্য পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে এসএমএস (ক্ষুদে বার্তা) যোগে অনুরোধ জানানো হয়

সে পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুনের মধ্যে সারাদেশের ছয় হাজার ৫৬২টি প্রতিষ্ঠান মোট ১৫ হাজার ১২১টি পদের জন্য অনলাইনে চাহিদা প্রদান করে।

এ চাহিদার ভিত্তিতে এনটিআরসিএ গত ২৯ জুন আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে আবেদন আহ্বান করলে প্রায় ১৪ লাখ আবেদনপত্র জমা পড়ে। অতিরিক্ত কাজের নামে সরকারি অর্থ তছরুপ :

অতিরিক্ত কাজের নামে সম্মানীভাতা জায়েজ করতে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এএমএম আজহার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়া একটি প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘এনটিআরসিএর শুরু থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত কাজের নামে সম্মানী বা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন।

অতীতে প্রতিটি পরীক্ষায় মোট ৯০ দিনের জন্য দৈনিক প্রত্যেক কর্মকর্তাকে ৪০০ টাকা ও কর্মচারীকে ২০০ টাকা হারে অতিরিক্ত টাকা দেয়া হতো।’ এসব পরীক্ষা নেয়াই এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের মূল কাজ হওয়ায় এজন্য সম্মানী অর্থের নামে ইচ্ছেমতো সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে গত দুই অর্থবছরে আপত্তি জানানো হয় সরকারি অডিটে।

কিন্তু অডিট আপত্তিকে আমলে না নিয়ে সংস্থাটি এখন সম্মানী অর্থের নামে অতিরিক্ত টাকার পরিমাণ আরও বাড়ানোর আবদার জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান প্রতিবেদনে আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড যেমন-ঢাকা, যশোর, খুলনা (যদিও খুলনায় শিক্ষা বোর্ড নেই), মাদ্রাসা বোর্ড ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা কার্যক্রমের (প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আলাদা বোনাস) জন্য একাধিক বোনাস/সমপরিমাণ অর্থ আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম ছায়েফ উল্লাহ সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্মানী ভাতা নেয় হাইকোর্টের রায়ের আলোকে। কিন্তু এনটিআরসিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিসের ভিত্তিতে সম্মানীভাতা নিচ্ছে?’

এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডগুলো যে সম্মানী ভাতা নেয় তা পুরোপুরি বৈধ।

কিন্তু এনটিআরসিএ সম্মানী ভাতার নামে যে টাকা-পয়সা নিচ্ছে সেটা পুরোপুরি অবৈধ। কারণ তাদের মূল কাজই হলো- নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়া। এটা রুটিন দায়িত্ব। এই কাজের জন্য সম্মানী নেয়া অসম্মানজনক।’

সূত্র: দৈনিক সংবাদ, ১ অক্টোবর, ২০১৬