শিক্ষকদের কাছে ফের প্রস্তাব চেয়েছে মন্ত্রণালয়

সংকট নিরসনে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে প্রস্তাব চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষকেরা বলেছেন, প্রস্তাব তাঁরা আগেই দিয়েছেন। তবে মন্ত্রণালয় যেহেতু প্রস্তাব চেয়েছে, সেহেতু ফেডারেশনের পক্ষ থেকে তা আবার দেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়গতকাল মঙ্গলবার ছিল দেশের ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের তৃতীয় দিন। দেশের ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকালও ক্লাস বা পরীক্ষা হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শিক্ষকদের দাবি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। শিক্ষকেরা প্রস্তাব দিলে মন্ত্রণালয় সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবে। এরপর বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘একবার কোনো সুবিধা দিলে তা প্রত্যাহার করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেয়ে আসা সুবিধা কীভাবে বহাল রাখা যায়, সেই লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। সমাধানের উপায় খোঁজা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান হবে। তাই আলোচনাকে নিষ্ফল বলা উচিত নয়।

গত মঙ্গলবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও মহাসচিব। ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেছেন, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। আমরা ধরে নিচ্ছি, আন্দোলনকে দীর্ঘসূত্রতার দিকে নেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দায়ী।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরতে চান। দাবি মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ক্লাসে ফিরে যাবেন। তবে তাঁদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া এখন নির্ভর করছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের ওপর।

আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফরিদ বলেন, ‘দীর্ঘ আট মাস ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, এই লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার আগেও নয় দিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো প্রকার সাড়া না পেয়ে আমরা এই পর্যায়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

গতকাল শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রায় ফাঁকা ছিল। শ্রেণিকক্ষগুলো ছিল তালা দেওয়া। তবে শিক্ষকেরা কেউ কেউ নিজেদের কক্ষে বসেছেন। কলা ভবন ও কার্জন হল কেন্দ্রে কয়েকটি বিভাগের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা হয়েছে।

শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারলে মনে হয় দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তিনি বলেন, সমস্যাটা যে জায়গায়, তার সমাধান করা খুবই সহজ। একবার বসলেই এর সমাধান হতে পারে। বেতনবৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি যত দ্রুত শিক্ষকদের সঙ্গে বসবে, তত দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে মত দেন উপাচার্য।

জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা হয়নি। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য প্রথম বর্ষের ওরিয়েন্টেশন কোর্স ও ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রফিকুল আলম বেগ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কারণে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণেই ওরিয়েন্টেশন ও ক্লাস স্থগিত করতে হয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মোট ছয়টি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এমতাজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সরকার যত দ্রুত শিক্ষকদের এ যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, ততই তা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গতকাল সাধারণ সভা করে আন্দোলন চলাকালে কোনো ধরনের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি খন্দকার শরীফুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনে নামতে শিক্ষকেরা বাধ্য হয়েছেন। গতকাল দুপুরে শিক্ষকদের মর্যাদা ও সর্বোচ্চ বেতন নির্ধারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্ট।

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি অব্যাহত আছে। কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৃচি-বিসিএস ২৬ ক্যাডার ও চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গতকাল ফোরামের এক সভায় অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের বৈষম্য ও বিভিন্ন অসংগতি দূর করার দাবি জানানো হয়।

সূত্র: দৈনিক শিক্ষা