মায়ের সঙ্গে চা বিক্রি করেও জিপিএ ৫

রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মৌসুমী মায়ের সঙ্গে চা বিক্রি করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিও ৫ পেয়েছেন। সন্তানের এমন সাফল্যে বেজায় খুশি দিনমুজর হতদরিদ্র পিতা আব্দুর মান্নান ও মাতা নাজিরা বিবি। মেধাবী হওয়ায় পড়ালেখায় সব সময় অনুপ্রেরণা যোগাতেন তার মা নাজিরা বিবি। এ জন্য শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও মৌসুমীর পড়ালেখায় ছেদ পড়েনি। ক্লাসে ভালো হওয়ায় স্কুল শিক্ষকরাও তাকে সহযোগিতা করেছেন। মৌসুমীর স্বপ্ন একজন ডাক্তার হওয়া। কিন্তু চরম দারিদ্র্য তার সেই স্বপ্ন পূরনের পথে বিশাল বাধা। এই বাধা ডিঙিয়ে সেই স্বপ্ন পূরন হবে কিনা সেই চিন্তায় এখনই তাকে ঝেঁকে বসেছে।

চরম দারিদ্র্য ওর অজম্ম সঙ্গী। পেটে ভাত জোটেনা, পরনের ন্যূনতম চাহিদামত কাপড় থাকেনা। এর ওপর লেখা পড়ার করার ইচ্ছা প্রকাশটাই বুঝি অযৌক্তিক আবদার। তবু ও সে দমেনী। হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে। নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই ওর ভবিষ্যৎ গড়ার পথে হাটছে সে। মূল লক্ষ্য -যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দারিদ্র্র্য দূর করে পরিবারের দুঃখী পিতা মাতা ও স্বজনদের মুখে হাসি ফোটানো। সে অনুযায়ী জীবনযুদ্ধে নেমে জীবনের প্রথমেই শত বাধা পেরিয়ে মৌসুমী দেখিয়েছেন বিশেষ কৃতিত্ব। গত বুধবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন প্লাস পেয়েছেন তানোরের মৌসুমী।

মৌসুমীর পিতা আব্দুল মান্নান এই প্রতিবেদকে জানান, রাস্তার ধারে সরকারী খাস জায়গায় একটি মাত্র টিনের কুড়ে ঘর। পরিবারের সকলে এক সঙ্গে ঘুমায়। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। হারিকেনের আলোতে মৌসুমী রাত জেগে পড়া-লেখা করতো। প্রাইভেট পড়ার মত সামর্থ ছিলো না তার বলেও জানান।

কিন্তু মেয়ের পড়া-লেখার আগ্রহ দেখে তিনি অতি কষ্টে পড়ালেখা খরচ চালিয়ে গেছেন। সংসার চলে না তাঁর অপর পড়া লেখার বাড়তি খরচ। এক কাঠা জমি নেই। হাতে কাজ করে পেটে খাই। তিনিও চান তার মেয়ে শহরের ভাল কলেজে পড়াশুনা করুক। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই।

এব্যাপারে মেধাবী মৌসুমীর মা নাজিরা বিবি জানান, কোন কোন দিন ঘরে খাবার থাকেনা, না খেয়ে মেয়ে তার স্কুলে গেছে। তার স্বপ্ন মেয়েকে শহরের ভাল কলেজে পড়ানোর কিন্তু অর্থের অভাবে স্বপ্ন তার স্বপ্ন অধরায় রয়ে যাবে কি না যানিনা বলে আক্ষেভ করেন। অনেকে এসেছিল মৌসুমীকে শুভেচ্ছা জানাতে। তবে সমাজের ধনী ব্যক্তিরা এখনো পর্যান্ত কেউ শুভেচ্ছা জানাতে বা সাহায্যর হাত বাড়ায়াতে আসেনি।

আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিন বলেন, গরীবের ঘরে জন্ম নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখা-পড়া করে সে আজ সার্থক হয়েছে। আমরা দোয়া করি মৌসুমী মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজের সেবা করবে। তিনি আরো জানান, এবার তার বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে। তার মধ্যে ৫ জন জিপিএ-৫ ও মৌসুমৗ গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।

এনিয়ে মেধাবী মৌসুমী বলেন, তিনি গরীবের মেয়ে। শত কষ্টের মধ্যে দিয়ে তার পিতা-মা লেখা-পড়ার খরচ চালিয়েছে। প্রাইভেট পড়ার মত সমর্থ্য ছিলো না তার। মার সাথে চায়ের দোকান চালিয়ে পড়া লেখা চালিয়ে গেছি। পিতা-মাতার দোয়া, শিক্ষক ও সহপাঠিদের সহযোগিতায় আজ তিনি ফলাফল করতে পেরেছি। তার ইচ্ছেন তিনি ডাক্তার হবেন। গরীব মানুষের সেবা করবেন। তবে শহরের ভাল কলেজে ভর্তি করে পড়া লেখা খরচ যোগানো পিতার পক্ষে সম্ভব নয়। কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছেননা বলেও জানান তিনি।

সূত্র: রাজশাহী জার্নাল