মালয়েশিয়ায় গিয়ে পড়তে পারেন দেশের খরচেই!

উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। সে স্বপ্ন পূরণের জন্য কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি জমান। বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের বিষয়টি অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতির। ভালো ফল করার পাশাপাশি প্রয়োজন মানসিক প্রস্তুতি। আজ থাকছে মালয়েশিয়ায় পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয়সহ নানা বিষয়ের আলোচনা।

1435663749phpmKeek9
শিক্ষা খাত মালয়েশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে উঠেছে এখন। মনসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এখন মালয়েশিয়া। উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাগত ও বিশেষায়িত কোর্সের সুযোগ আছে এখানে। কম খরচে মানসম্পন্ন কোর্সের সুযোগ তৈরি হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্য এখন মালয়েশিয়া।

‘এশিয়ার ইউরোপ’ খ্যাত মালয়েশিয়ায় বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসছে। এদের বেশির ভাগই আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য। বাংলাদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় যান। ‘সবাই মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে তাই আমিও যাচ্ছি, ব্যাপারটা এমন হওয়া উচিত নয়। কোনো দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কত, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ কেমন, পার্ট-টাইম চাকরির কোনো সুযোগ আছে কি না ইত্যাদি। এ ছাড়া নিজের সামর্থ্যের কথাও ভাবতে হবে। এর পর হিসাব কষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ মালয়েশিয়ায় সরকারি ও উচ্চ মানের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় বেশির ভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই ভর্তি হওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএসও প্রয়োজন হয় না। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে টিউশন ফিও কম। মূলত এই কয়টি কারণেই বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান।

উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা গেলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। সেসব শিক্ষার্থীর এসএসসি  ও এইচএসসি জিপিএ  ৫.০০ কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি ও বেরসকারি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি তারা মালয়েশিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। ইউএম, আইআইইউএম, ইউপিএম, ইউআইটিএম, ইউইউএম, এমইডিআইইউ, টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া, সানওয়ে, আইএনটিআই, নীলাই, আইআইসি, এফটিএমএস ইত্যাদিতে পড়তে আসতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে জেনে নিতে হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কেমন।

যেমন- মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমইডিআইইউ ইত্যাদির খরচ বিষয় ও ক্রেডিট অনুসারে (শুধু টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ বাদে) বছরে ৫ থেকে ১০ হাজার রিংগিত (এক লাখ ১০ হাজার থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা), আবার টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদির খরচ বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার রিংগিত (চার লাখ ৪০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা)। বেশি খরচের বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসার পর পরবর্তী সেমিস্টারগুলোর টাকা জোগাড় করতে সমস্যা হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে তাকে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় (দুই-তিন মাস) হাতে থাকতে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে তাকে দেশে ফিরে যেতে হবে না। আর কেউ যদি অপছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ পরিবর্তন করতে চায়, সেটাও তাকে করতে হবে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে নিয়মিত থেকে এবং পর্যাপ্ত সময় আগে।

ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। কিন্ত ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা মোটামুটি হলে তারা ইউইউএম, এমইডিআইইউ ইত্যাদি কম খরচের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এমন শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে আসা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশ থেকে এমন অনেক শিক্ষার্থী আসেন, পড়ার নামে কাজ করাই যাদের উদ্দেশ্যে। মালয়েশিয়ায় ফুল টাইম কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যাক ভালো চাকরি পেলেও বাকিরা সবাই পুরোপুরি শ্রমিক। দালালদের সহায়তায় নকল অথবা অন্যের সার্টিফিকেট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী পরিচয়ে এক শ্রেণীর মানুষ আসে। এই শিক্ষার্থী নামের শ্রমিকরা বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। যাদের উদ্দেশ্য কাজ করে অর্থ উপার্জন করা, পড়াশোনা নয় তাদের উচিত কাজের ভিসা নিয়ে আসা।

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কিংবা ইনস্টিটিউটগুলোতে তুলনামূলক অনেক কম খরচে উন্নত পড়াশোনা করা যায়। এখানে পড়ার খরচ বাংলাদেশি অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও কম। এক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরূপ লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি দারুল ইমান মালয়েমিয়া (ইউডিএম), ইউনিভার্সিটি ইসলাম আন্ত্রাবাংসা ও ইউনিভার্সিটি মালয়েমিয়াসহ এ জাতীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলা যায়।

যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় এখানে তাদের শাখা খুলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কোর্স পরিচালনা করছে।

ইংরেজী বহুল প্রচলিত হওয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধা হয় না এখানে। জীবনযাপনের ব্যয় কম, বছরে ৩,৭৫০ ডলারের মত। ১০০ টির বেশি দেশের ৫০ হাজারের মত বিদেশী শিক্ষার্থী এখন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা (সম্ভাব্য বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য):

২০ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
২৪ টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউ
৩৭ টি পাবলিক কমিউনিটি কলেজ
৩৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
৪টি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা
৫০০ টি বেসরকারী কলেজ
৩৮ টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলীয় ধাঁচের)

মালয়েশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা: http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_universities_in_Malaysia পড়াশোনার জন্য মালয়েশিয়ায় প্রবেশের নিয়মকানুন তেমন জটিল কিছু নয়।

স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত

*মালয়েশিয়ার কোন সরকারি বা বেসরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন কোন কোর্সে ভর্তির অনুমতি থাকতে হবে। অবশ্যই ইংরেজি বিষটি কোর্সে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
*পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া এবং ভ্রমণ ব্যয় নির্বাহের আর্থিক সঙ্গতি থাকতে হবে।
*কেবলমাত্র পড়াশোনার জন্য এ ভিসা দেয়া হবে।
*সুস্বাস্থ্য ও সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।

স্টুডেন্ট পাসের জন্য আবেদন পদ্ধতি

মালয়েশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমস্ত আবেদন করতে হবে। অনুমোদন এবং স্টুডেন্ট পাস ও ভিসা ইস্যুর কাজটি করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট। তবে চীনের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়ার কাজটি করে চীনে মালয়েশীয় দূতাবাস বা কাউন্সিল অব মালয়েশিয়া।

শিক্ষার্থীর সাথে পরিবারের সদস্যদের অবস্থান

ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অনুমোদন নিয়ে পুরো কোর্স চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীর বাবা-মা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতে পারেন। আর পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রী, সন্তানরাও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতে পারেন।

খন্ডকালীন চাকরি

এক সপ্তাহের বেশি ছুটি থাকলে বা সেমিস্টার বিরতির সময় শিক্ষার্থীরা খন্ডকালীন চাকরি করতে পারেন, তবে সেটা সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশি নয়।

ইমিগ্রেশন ও স্টুডেন্ট পাস সংক্রান্ত আরও তথ্যের জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করা যেতে পারে:

ফোন: ৬০৩-৮৮৮০১০০০

ফ্যাক্স: ৬০৩-৮৮৮০১২০০

ওয়েবসাইট: www.imi.gov.my

ভাষা শিক্ষা

মালয়েশিয়ার ভাষা শেখার জন্য সহায়ক হতে পারে http://www.bahasa-malaysia-simple-fun.com সাইটটি।