বিসিএস এ ৬৭ শতাংশ নিয়োগ মেধায়

৩৫তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটার চেয়ে মেধায় বেশি নিয়োগ পেয়েছে। এর পরিমাণ ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া এই বিসিএসে পুলিশ, চিকিৎসক, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ক্যাডার পদে বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত ৩৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এবারও মেধা ও প্রাধিকার কোটা আলাদা করা হয়নি। শ্রেণিগত বৈষম্য দূর করতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে পিএসসি।

১ হাজার ৮০৩টি পদের জন্য ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও গতকাল ২ হাজার ১৫৮ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)।

এর মধ্যে সহকারী পুলিশ সুপারের ৫০টি পদের বিপরীতে ১১৯ জন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার একটি পদের বিপরীতে ১৫৮ জন, সহকারী সার্জনের ৩১৭টি পদের বিপরীতে ৩৮৭ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জনের ৫৪টি পদের বিপরীতে ৬৭ জন, মৎস্য ক্যাডারের ৮টি পদের বিপরীতে ২৯ জন, বিসিএস গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলীর (সিভিল) ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষকের ৬৫টি পদের বিপরীতে ৮৪ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ছাড়াও কয়েকটি পদে অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিসিএসের বিদ্যমান কোটা অনুযায়ী, ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। বাকি নিয়োগ হয় কোটায়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পোষ্য, ১০ শতাংশ নারী কোটায়, ১০ শতাংশ জেলা কোটায়, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটায়। তবে কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় অধিকাংশ সময় এসব পদ শূন্য রাখতে হয়। এর ফলে একদিকে যেমন মেধাবীরা উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি, আরেকদিকে শত শত পদ শূন্য থেকেছে।

অতীতের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৮তম বিসিএসে প্রার্থী না পাওয়ায় প্রাধিকার কোটার বিপরীতে ৮১৩টি পদ শূন্য রাখে পিএসসি। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৬২৮টি, নারী কোটায় ৪৫ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ১৪০টি পদ শূন্য ছিল।

২৯তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৫৩৮টি, নারীর ৮১টি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১১১টিসহ কোটার ৭৯২টি পদ শূন্য ছিল। ৩০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার ৬১৩, নারী ৩২, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১৩৯টিসহ কোটার ৭৮৪টি পদ শূন্য ছিল। ৩১তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা ৫৫০, নারী ৫৪, ক্ষৃদ্র নৃগোষ্ঠীর ১২৯টিসহ কোটার ৭৭৩টি পদ শূন্য ছিল।

কোটার শূন্য পদগুলো পূরণ করতে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও নারীদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস হয়। কিন্তু ওই বিসিএসেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮১৭, নারী ১০, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২৯৮টিসহ মোট ১ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়।

পিএসসি সূত্র বলেছে, এবার পদগুলো, বিশেষ করে টেকনিক্যাল ক্যাডারের পদ যেন শূন্য না থাকে এবং সেখানে যেন মেধাবীরা নিয়োগ পান, এ কারণে সরকারের অনুমতি নিয়ে এই পদগুলোতে মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে যেখানে বিসিএসে ৪৫ শতাংশ মেধাবী নিয়োগ পেত, সেখানে এবার অন্তত ৬৭ শতাংশ মেধাবী নিয়োগ পেয়েছে।

২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন প্রার্থী আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ৬ মার্চ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন ২ লাখ ৮ হাজার ২৪ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ৩৯১ জন উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় ৬ হাজার ৭৮ জন উত্তীর্ণ হন। ৬ হাজার ১৫ জন মৌখিক পরীক্ষা দেন। চূড়ান্ত ফলে ৫ হাজার ৫৩৩ জন উত্তীর্ণ হলেও তথ্যবিভ্রাট ও প্রশাসনিক কারণে ক্যাডারের ১৬ জনের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে।

পদ-স্বল্পতার কারণে সুপারিশ করা যায়নি, এমন ৩ হাজার ৩৫৯ জনকে নন-ক্যাডারে রাখা হয়েছে। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৬০-৭০ হাজার পদ শূন্য থাকায় তাঁদের একটা বড় অংশই নন-ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করে পিএসসি।

৩৫তম বিসিএসের সার্বিক ফল বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আড়াই লাখ প্রার্থী থেকে যে ২ হাজার ১৫৮ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ করা হলো, তাঁরা আসলেই খুব মেধাবী।

আর এবারের বিসিএসে কোটার চেয়ে মেধাবীরা বেশি নিয়োগ পেয়েছেন।’ মেধা ও কোটার ফল আলাদা করা হয়নি কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সুপারিশ করছি, মেধা ও প্রাধিকার কোটা দুটোর জন্যই করছি। এ ক্ষেত্রে আমরা কোনো শ্রেণিগত বৈষম্য রাখতে চাইনি।

ফলে পেশাগত জীবনে সবাই একভাবে কাজ করতে পারবেন। পুলিশ, চিকিৎসক, কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে অতিরিক্ত নিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পদ শূন্য ছিল। চাহিদাও পাওয়া গেছে। তাই এই নিয়োগ। এর ফলে প্রশাসনে গতি আসবে।

৩৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে ৭ আগস্ট ‘তারুণ্যের সময় খেয়ে ফেলছে বিসিএস’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর ১০ দিনের মাথায় পিএসসি ৩৫তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করল। এ ছাড়া ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে। ৩৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর।

এ প্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বিসিএসের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ জন্য প্রতিটি বিসিএসের একটা সময়সূচি (রোডম্যাপ) ঠিক করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এখন থেকে সেই সময়সূচি অনুসরণ করতে পারব।’