বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়!

বিজ্ঞান গবেষণার মধ্যে দেশের শীর্ষ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেরা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শীর্ষ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাবিই সেরা হয়েছে বিজ্ঞান গবেষণায়।

স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস ওই তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা, উদ্ভাবন ও সমাজে এর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছরই শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে আসছে ওই দুটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ প্রকাশিত তালিকায় স্থান পেয়েছে বিজ্ঞান গবেষণায় নেতৃস্থানীয় বাংলাদেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান। যদিও ২০১৫ সালে তালিকায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ছিল নয়টি। নতুন করে স্থান পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শাবি। স্থান পেয়েই এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষ স্থান দখলে নিয়েছে।

তবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বরাবরের মতোই এবারো শীর্ষে রয়েছে সেন্টার ফর হেলথ অ্যান্ড পপুলেশন রিসার্চ, যা আইসিডিডিআরবি নামে পরিচিত। পরের স্থানগুলোয় রয়েছে যথাক্রমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এ বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে তালিকায়।

স্পেনের বেশ কয়েকটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পরিচালিত হয় সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ। আর একাডেমিক জার্নালের ডাটাবেজ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্কপাস।

এ দুই প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা আইসিডিডিআরবির বৈশ্বিক অবস্থান ৫৯৪তম। ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের টিকা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৫ সালে সাতটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেছে শাবি। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে এর অবস্থান ৬১০ এ। ডিজিটালাইজেশন, রোবটসহ বেশ কয়েকটি গবেষণায় ব্যাপক অবদান রেখেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।

তালিকায় থাকা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ৬১৫তম। বিজ্ঞান-বিষয়ক নানা গবেষণা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। এর মধ্যে অন্যতম খাদ্যে কী পরিমাণ সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া রয়েছে তা নির্ণয়, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ভূমিকম্পের ওপর গবেষণা। এছাড়া গরুর ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস শনাক্ত, চিকিৎসাকেন্দ্রসহ ডেইরি ও পোলট্রি ফার্ম থেকে কী ধরনের ব্যাকটেয়িরা সরাসরি পরিবেশে প্রবেশ করছে, তা নিয়েও গবেষণা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির।

বুয়েটের অবস্থান বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৬২৫তম। সম্প্রতি বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার উদ্ভাবন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মানোন্নয়ন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আলোচনায় নিয়ে আসে। এছাড়া

সহজলভ্য ও টেকসই নির্মাণসামগ্রী উদ্ভাবন, আর্সেনিকের মূল কারণ অনুসন্ধান ও তা দূরীকরণে মৌলিক গবেষণা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়েও গবেষণা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

দেশে পঞ্চম স্থানে থাকা বিএসএমএমইউর অবস্থান বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৬৪০তম, যা গত বছর ছিল ৬৭১তম। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময় বিভিন্ন ধরনের গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয়। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও পাঁচ বছরের মধ্যে দুই বছর বাধ্যতামূলক গবেষণা করতে হয়।

দেশে ষষ্ঠ স্থানে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৬৪১তম। আর্সেনিকযুক্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার উদ্ভাবন, মশা নিধনে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ও সূর্যকন্যা গাছের রস দিয়ে মশা নিধন, আয়ুর্বেদিক ওষুধের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, আবর্জনা থেকে জৈব সার ও গ্যাস উত্পাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়া বন্যপ্রাণী থেকে মানুষ ও মানুষ থেকে বন্যপ্রাণীতে রোগের সংক্রমণ, প্রজাপতির বিভিন্ন জাত নির্ণয়, শিল্প-কারখানার দূষিত পানি পরিশোধন নিয়েও গবেষণা রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাগার।

সপ্তম স্থানে রয়েছে কৃষি, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা ও উন্নয়নে অবদান রাখা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৬৬৫তম অবস্থানে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথমে আলোচনায় আসে কৃত্রিমভাবে মাছের প্রজনন নিয়ে গবেষণার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে ধান কাটার যন্ত্র বা থ্রেশার মেশিন ও আগাছা নিধন যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়া বিভিন্ন জাতের ফল ও মাছের জাত উদ্ভাবন নিয়েও গবেষণা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়েছে গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে।

অষ্টম অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৬৬৬তম। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্ট্রবেরির জাত উদ্ভাবন সবচেয়ে বেশি আলোচিত। এছাড়া টিস্যু কালচার ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে অমেরুদণ্ডী প্রাণী নিয়েও গবেষণা হচ্ছে।

প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিশ্বর্যাংকিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ৬৬৮তম। ইউজিসির তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮৮টি গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয়। বিদেশী সাময়িকীতে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রবন্ধের সংখ্যা ১২০, দেশী সাময়িকীতে ২৩ ও প্রকাশিত পিআর রিভিউকৃত সাময়িকীর সংখ্যা ৭।

দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৫টি গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয়েছে।

দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তালিকায় কুয়েটের পরের অবস্থানটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একাদশতম হলেও বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ৬৭৫তম, যা আগের বছর ছিল ৬৭৭তম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি বিরল প্রজাতির ব্যাঙ শনাক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া টাইডাল নদীতে রুই-জাতীয় মাছ উত্পাদন বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিরল প্রজাতির অর্কিড উদ্ভাবন, ওয়েব সিম্যাট্রিকসের ওপর গবেষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ।

জানা গেছে, তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১০০টি গবেষণা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সিমাগো রিসার্স গ্রুপ ও স্কপাস জরিপের ক্ষেত্রে আটটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে।

এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিজ্ঞান গবেষণার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফ্রান্সের সেন্টার ডি লা রিসার্চ ফর সায়েন্টিফিক। চীনের একাডেমি অব সায়েন্সেস রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। আর শীর্ষ পাঁচের মধ্যে এর পরের তিনটি স্থানেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো— হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও গুগল ইনকরপোরেশন।

ভারতের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ৯৯তম। তালিকায় স্থান পেয়েছে দেশটির মোট ২৪২টি প্রতিষ্ঠান। ভারত ছাড়া এ তালিকায় পাকিস্তানের ২৩টি, শ্রীলংকার চারটি ও নেপালের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর বাংলাদেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে।