বিদেশে উচ্চশিক্ষায় সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের কিছু টিপস

আমরা অনেকেই বাইরে উচ্চশিক্ষা নেবার জন্য জিআরই, জিম্যাট, আইএলটিএস, টোফেল, স্যাট ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সকলেরই ইচ্ছা একটি ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের সুযোগ নিশ্চিত করা। সেই সাথে ফান্ডের বিষয়টিও বিবেচনাধীন। বর্তমান সময়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের অনেকেরই প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র। স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য ভর্তির প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন।

studyabroaddd1যেহেতু কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়া এবং সেই প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি-পরবর্তী অভিজ্ঞতার অনেকটা নির্ভর করে নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ওপর। তাই ভর্তির প্রক্রিয়া শুরুর অন্তত মাস দুয়েক আগে থেকেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে ঘুরে দেখতে হবে এবং প্রয়োজন হলে সেখানে পড়ছেন এমন কোনো শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ব্যাপারে বেশির ভাগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে যে বিষয়টি প্রাধান্য পায় তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ এবং শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে কম হয়, কিন্তু সীমিত তহবিলের কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া বৃত্তির পরিমাণও সীমিত হয়ে থাকে। অপর দিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যয়বহুল হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মেধা ও আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী প্রদানকৃত বৃত্তির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক হোক বা প্রাইভেট, যেকোনো ধরনের বৃত্তির জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতা থাকে তীব্র। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার আগেই ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে নিজেকে এই তীব্র প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিংকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলেও এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু বিষয়ও সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত, যা শিক্ষার মান এবং বিশ্ববিদ্যালয়-পরবর্তী কর্মজীবনে প্রভাব ফেলে। যেমন কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে অধ্যাপকদের সঙ্গে যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়। আবার বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অন্যান্য বিষয়ে পড়ছেন এমন শিক্ষার্থীর সঙ্গে চেনা-জানা হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন বা অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকে এবং খণ্ডকালীন চাকরি খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা দারুণভাবে সহায়তা করেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টি কোথায় অবস্থিত, শহরে না শহরের বাইরে, যদি শহরে হয় তাহলে কোন শহরে, সেখানে কী ধরনের কাজের সুযোগ বেশি, এ সবকিছুর ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করে ইন্টার্নশিপ এবং অন্যান্য সুযোগ কতটা পাওয়া যাবে। এ কারণে শিক্ষার্থীকে নিজেই স্থির করতে হবে তিনি কী ধরনের শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা পেতে আগ্রহী, ভবিষ্যতে কোথায় ক্যারিয়ার গড়তে চান এবং সে অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবশ্যিক শর্তগুলো পূরণের প্রতি লক্ষ্য রাখা। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের জন্য কিছু টেস্ট স্কোর প্রয়োজন হয়, যেমন স্নাতক পর্যায়ের জন্য স্যাট, স্নাতকোত্তর পর্যায়ের জন্য জিআরই, জিম্যাট কিংবা ভাষাগত দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য আইএলটিএস, টোফেল ইত্যাদি। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য এসব পরীক্ষায় ন্যূনতম স্কোরের আবশ্যকতা উল্লেখ করা থাকে। সে ক্ষেত্রে ওই স্কোর না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আবেদন করা সম্ভব হবে না, তাই আগে থেকেই এসব নিয়মকানুন জেনে রাখতে হবে।

কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য প্রথমেই ঘুরে আসা উচিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট থেকে। ভর্তি-সংক্রান্ত সব তথ্যের পাশাপাশি এসব ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, পড়াশোনার খরচ, বৃত্তি ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনা, যা একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার সুযোগ করে দেয়। একই সঙ্গে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একজন অ্যাডমিশন কাউন্সিলরের ই-মেইল দেওয়া থাকে, যাঁর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য জেনে নেওয়া যায়।