বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ‘বিল্যান্সার’

Amaderdesk_Now_Belancer

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য স্থানীয়ভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ‘বিল্যান্সার’। নতুন কিছু চমক নিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে খুব শিগগির। বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইটটি তৈরিতে সহযোগিতা করছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিল্যান্সারের তরুণ উদ্যোক্তা মো. শফিউল আলম বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইট চালুর নেপথ্যের গল্প বলেছেন ।

বিল্যান্সার গঠনের পেছনের গল্প কি?
মো. শফিউল আলম: ২০১৩ সালে ‘আমার ডেস্ক’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করি আমরা। কারণ তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের এ সংশ্লিষ্ট কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন ইলেক্ট্রনিক পেইমেন্ট, মোবাইল ভ্যাস, সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট এবং আউটসোর্সিং। আমাদের কোম্পানির কাজ বিশ্বব্যাপী সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, ইয়াহো ফাইন্যান্স, এমএসএন মানিসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আমরা বেশ গুরুত্বই পেয়েছি। কিন্তু এটি বিশাল একটি উদ্যোগ। দীর্ঘ সময় ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে একটু একটু করে এর কাজ করা হয়েছে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেসের মতো এতো বড় একটি প্লাটফর্মের যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ তা স্টার্টআপ উদ্যোগে সম্ভব ছিলো না। বিশেষ করে সারা বিশ্বের বায়ার বা ক্লায়েন্টদের কাছে ব্যাপক ব্র্যান্ডিং, মার্কেটপ্লেসের নির্ভরযোগ্য কারিগরি সক্ষমতা, পেইমেন্ট পদ্ধতি, ইনভেস্টমেন্ট, ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টের আস্থা ও আগ্রহের তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে সরকারি উদ্যোগের বিকল্প ছিলো না। আর সরকারি এই উদ্যোগটা নিজে থেকেই নিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আমরা তাঁর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি নিজ উদ্যোগে ‘আমার ডেস্ক’ নামটি পরিবর্তন করে ‘বিল্যান্সার’ নাম রাখেন। এরপর ১৭ মার্চ ‘বিল্যান্সার’ নামের ডোমেইনটি কেনা হয়।

বিল্যান্সার গঠনের ক্ষেত্রে কার অবদান বেশি বলে মনে করছেন?
মো. শফিউল আলম: আজ এই দেশিয় মার্কেটপ্লেস যে আমরা পেতে যাচ্ছি তা তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব হতো না। আমরা দারুণ আশান্বিত হলাম যে তিনি এই দেশিয় মার্কেটপ্লেস নিয়ে অনেক দূর যেতে চান এবং আগে থেকেই ভেবে রেখেছেন এর সফলতার নানা দিক ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে। এককথায় বলা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী উদ্যোগ না নিলে এটি অঙ্কুরেই ঝড়ে পড়তে পারত। প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অফিসিয়ালদের আগ্রহে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ব্র্যান্ডিং, মার্কেটপ্লেসের নির্ভরযোগ্য কারিগরি সক্ষমতা, পেইমেন্ট পদ্ধতি, ইনভেস্টমেন্ট, ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টের আস্থা ও আগ্রহ তৈরিসহ ইত্যাদি বিষয়ে দেখভাল করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এছাড়া এক হাজার স্বেচ্ছাসেবী আমাদের সাথে কাজ করছেন। তাদের প্রতি আমাদের অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং সাইট আর আপনাদের পার্থক্য কি?
মো. শফিউল আলম: বিল্যান্সার একটি আন্তর্জাতিক মানের অনলাইন ওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস যা ওডেস্ক-ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্সারের মতোই। আমরা এই মার্কেটে কাজ করার জন্য প্রথমে একটি গ্যাপ খুঁজে বের করি। যেমন, বাংলাদেশের মতো আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স রেস্ট্রিক্টেট কান্ট্রির গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে আমাদের লোকাল এপ্লয়াররা কাজ পোস্ট করতে পারেন না। তদুপরি অনেক ট্যালেন্ট ফ্রিল্যান্সাররা ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে পারেন না।

আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং সাইট থাকে মানুষ এখানে কেন আসবে?
মো. শফিউল আলম: আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোর সাথে আমাদের প্যাক্টিক্যালি কোন প্রতিযোগিতা নেই। আসলে তাদের সাম্প্রতিক সময়ের পলিসির কারণে অনেক ফ্রিল্যান্সার ঝোড়ে পড়বেন। আবার নতুনদের জন্যও ওসব সাইটে কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে ওসব সাইটে কেউ জব পোস্ট করতে পারেন না। সম্প্রতি সময়ে সরকার ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং কর্মসূচি চালু করেছেন। তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সাইটে কাজ ধরা এখন অনেকটা সোনার হরিণ হয়ে গেছে। ফলে এসব নানান শ্রেণীর মানুষের জন্য বিল্যান্সার আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে এবং তারা এখানে জব পোস্ট বা বিড করলে দ্রুত সাফল্য পাবে। তাই আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা এখানে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেখাতে সক্ষম হবেন।

বিভিন্ন বিদেশি মার্কেটপ্লেসগুলোর সাথে কিভাবে প্রতিযোগিতা করবেন?
মো. শফিউল আলম: আমরা প্রাথমিকভাবে সেসব মার্কেটগুলোতেই টার্গেট রেখেছি যেখানে গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসগুলো কাজ করতে পারে না। আমরা সেই মার্কেটগুলো ফিল আপ করতে চাই। তাছাড়া বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহৎ আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশন। আমরা যে সারা বিশ্বে অন্যতম সেরা তা প্রমানিত। একই সাথে আমরা আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের গ্রুমিং করছি, সহযোগিতা করছি। পাশাপাশি আমাদের গ্লোবাল কোম্পানির মাধ্যমে অধিক সেবা নিশ্চিত করা হবে। আমরা শুধু একটি মার্কেটপ্লেস হিসাবে আত্বপ্রকাশ করছি না পাশাপাশি সেবানির্ভর প্লাটফর্ম তৈরিই আমাদের টার্গেট।

আগামীতে বাংলাদেশে আরও কোন ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠান আসলে তাদেরকে কিভাবে দেখবেন?
মো. শফিউল আলম: কোন প্রতিষ্ঠান যদি সততা, সাহস এবং দেশপ্রেম নিয়ে দেশের বাজারে আগমন করে তাহলে অবশ্যই তাদেরকে স্বাগতম জানাবো। ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারলে নিঃসন্দেহে সেটাকে ভালো উদ্যোগ বলা যাবে। নতুন প্রতিষ্ঠান আসলে প্রতিযোগিতাও বাড়বে।

লোকাল মার্কেটে কাজের ক্ষেত্রে কোনগুলোকে চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে?
মো. শফিউল আলম: সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের লোকাল ডিজিটাল বায়ার এবং সেলারদের মাঝে প্রচন্ড অবিশ্বাস, পেইমেন্ট নিয়ে ঝামেলা। হয়ত বায়ার টাকা দিয়েছেন কিন্তু সেলার কাজ করে দেন নাই বা সেলার কাজ করে দিয়েছেন কিন্তু বায়ার টাকা দেননি এসব মিলিয়ে সর্বোপরি কমিটমেন্টের প্রচন্ড অভাব রয়েছে এখানে। এই কারণে আপনি খেয়াল করবেন গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে যারা কাজ করেন তারা লোকাল কাজ করতে চান না। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যেখানে অনেকে চেষ্টা করে চ্যালেঞ্জ ফেইস করেছে কিন্তু আমরা ইলেক্ট্রনিক পেইমেন্ট এবং ট্রানজেকশন স্পেশালিস্ট কোম্পানি তাই এই ম্যাথম্যাটিস্ক এবং এলগরিদমগুলো আমাদের জানা ছিল। এই ধরনের ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে এস্কু অ্যাকাউন্ট মেইনটেন করা, ক্যাশ-ইন, ক্যাশ-আউট, ফিনান্সিয়াল অপারেশন, সেটেলম্যান্ট অ্যান্ড রিকন্সিলিশান, ফ্রড ম্যানেজমেন্ট, ডিসপ্পিউট অ্যান্ড কনফ্লিক্ট রেজ্যুলেশন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল।

বাংলাদেশে সিকিউরিটি একটি বড় ইস্যু। এ জন্য আপনারা কি করেছেন?
মো. শফিউল আলম: আমরা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার আগেই নানানভাবে আমাদের বাগ খুঁজে তা সমাধান করার চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবী আমাদের নানানভাবে সহযোগিতা করছেন। সাইটের নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ওয়াল, ডিডস প্রটেক্টর, এন্টি ডি ডস, এঙ্ক্রিপ্টেড, ও এইচটিটিপিএস সংযুক্ত করা হয়েছে। সাইটের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করছি। আমাদের সিকিউরিটি এক্সপার্টরা হাইলি সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে এখানে সিকিউরিটি সমস্যা আগেই সমাধান করা হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং সাইটে অনেক সময় পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এটাকে আপনারা কিভাবে ম্যানেজ করছেন?
মো. শফিউল আলম: আমাদের এখানে ফ্রিল্যান্সাররা ফেইস টু ফেইস বা মাইলস্টোন অনুযায়ী কাজ করবে। যতটুকু কাজ ততটুকু পেমেন্ট দেওয়া হবে। ফলে এখানে ফ্রড করার একেবারেই কোন সম্ভাবনা নেই।

বিল্যান্সারের পেইমেন্ট সিস্টেম কেমন হবে?
মো. শফিউল আলম: যেহেতু আমাদের মার্কেটপ্লেসটি লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্প্লয়ারদের জন্য তাই আমরা সকল ধরনের সুবিধা সম্বলিত পেমেন্ট সিস্টেম খোলা রেখেছি। লোকাল মার্কেটের জন্য অ্যামপ্লয়াররা অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ভিসা, মাস্টার কার্ড, কিউ-ক্যাশ, বিকাশ, এমক্যাশ এবং অনলাইন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা ডিপোজিট করতে পারবেন এস্ক্রু অ্যাকাউন্টে। ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্টদের জন্য আমাদের ইতিমধ্যে ইউএসএতে একটি পুর্ণাঙ্গ কোম্পানি খোলা হয়েছে ২০১৪ সালে এবং পেপ্যালসহ সকল পেমেন্ট সুবিধা রাখা হয়েছে। এছাড়া ফ্রি্ল্যান্সারদের জন্য ডিরেক্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হবে। আমাদের প্রেফার ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্ট থাকলে এক দিনেই টাকা পেয়ে যাবেন আর বিদেশি অ্যামপ্লয়ারদের ক্ষেত্রে অন্যান্য মার্কেটপ্লেসগুলোর মতো কম্পিটিশন করা হবে।

বিল্যান্সারে জব পোস্ট ও বিডকারির জন্য কত শতাংশ ফি নিচ্ছেন?
মো. শফিউল আলম: যারা জব পোস্ট করবেন তারা দেবেন ৫ শতাংশ এবং যারা বিড করবেন তারাও দেবেন ৫ শতাংশ।

বিল্যান্সার কিভাবে সফল হবে বলে মনে করছেন?
মো. শফিউল আলম: আমাদের মতো বয়সে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন বা মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস শত শত মিলিয়ন ডলারের মালিক হতে পারলে আমরা কেন পারবো না? তাঁরা যে মোবাইল, ল্যাপটপ বা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তা আমরাও করছি। তাহলে তাঁরা পারলে আমরা কেন পারবো না? আমরা এক সময় বিশ্ব দরবারে আমাদের অর্জনের কথা বলতে পারবো। আমরা আমাদের সফলতার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

আপনি নিজে একজন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তার কোন গুণ থাকা বেশি জরুরী মনে করে?
মো. শফিউল আলম: উদ্যোক্তা মানে সমাধানকারি। আসলে যে সমস্যার সমাধান করতে জানেন তাকেই আমি উদ্যোক্তা বলবো। কারণ সমস্যা মানেই হচ্ছে অপরচুনিটি, সুযোগ এবং সম্ভাবনা। তাই যিনি সমস্যার মোকাবেলা করতে পারেন এবং সমস্যা বা মানুষের কটুকথা সহ্য করতে পারেন তিনিই মূলত উদ্যোক্তা। একটি কাজ শুরু করার সময় মানুষ অনেক আজেবাজে কথা বলেন। কিন্তু সফল হলে সবাই এসে প্রশংসা করেন।

বিল্যান্সারে গ্রাহক রেজিস্ট্রেশন ক্যাপাসিটি কত?
মো. শফিউল আলম: প্রাথমিক অবস্থায় ১০ লাখ গ্রাহককে সেবা দেওয়ার ক্যপাসিটি করা হয়েছে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই মার্কেটপ্লেস কিভাবে ভ্যালু অ্যাড করবে?
মো. শফিউল আলম: আমাদের মার্কেটপ্লেসটি প্রাথমিকভাবে এক্সক্লুসিভলি বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। সকল কাজ জেনারেট করা হবে লোকালি এবং ইন্টারন্যাশনালি। বলা যেতে পারে, আমদের লোকাল মার্কেট সাইজও কিন্তু কম না। প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারে বাজার। আমাদের ২৩ লক্ষ ছোট ও মাঝারি কোম্পানি আছে যাদের অধিকাংশ আগামী ৫ বছরের মাঝে টেকনোলজিতে প্রসেস ট্রান্সফর্ম করবে। আমাদের প্রায় ১৫ হাজার আইটি গ্রাজুয়েট বের হয়ে এবং প্রায় ১৭ লক্ষ নতুন ছাত্র ভর্তি হয় ৮০টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে – যাদের জন্য লোকাল কাজ উন্মুক্ত থাকবে এবং একই সাথে ইন্টারন্যাশনাল কাজের উপযোগি হবে। পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে যে আরও ৭০হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে তাদেরও একটি নিজেদের দেশে তৈরি নিজেদের মার্কেটপ্লেসে কাজ করার সুযোগ থাকবে। প্রাথমিকভাবে লোকাল কাজ করে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক কাজের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য বিল্যান্সারের কোন বিকল্প হতে পারে না।

বিদেশি বায়ার ও ক্লায়েন্টদের কিভাবে এই মার্কেটপ্লেসে সংম্পৃক্ত করা হবে?
মো. শফিউল আলম: প্রাথমিকভাবে আমাদের পুর্ণাঙ্গ টার্গেট হচ্ছে লোকাল মার্কেট ডেভেলপ করা। লোকাল আইটিইএস এবং নন-আইটি সফট ওয়ার্ক কাজগুলোকে মার্কেটপ্লেসে নিয়ে আসা এবং দেশি ফ্রি্ল্যান্সারদের মাঝে ডিস্ট্রিবিউট করা। আমাদের সুনির্দিষ্ট মার্কেটিং এবং কাস্টমার ইকুইজিশন প্ল্যান আছে যা আপনারা সময়ের সাথে সাথে দেখতে পাবেন। এরমাঝে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্লান হচ্ছে একটি প্রপার স্কিল প্রোফাইল করা যে ফ্রি্ল্যান্সার বলতে শুধু প্রোগ্রামিং বা ডিজাইন ওয়ার্ক বুঝায় না এইটা আমরা পরিবর্তন করতে চাই।

বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং কিভাবে হবে?
মো. শফিউল আলম: যেহেতু বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহৎ ফ্রিল্যান্সিং ডেস্টিনেশন তাই আমাদের একটি ব্র্যান্ডিং তৈরি করা আছে। এখন শুধু অধিক সেবা এবং সততার মাধ্যমে নিজেদের প্রমান করা। পাশাপাশি আমরা স্কিল প্রোফাইল করে ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজে এগুবো। আর এসবই সরকারি নেতৃত্বে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় করা হয়।

বিল্যান্সারের কারিগরি দিক কিভাবে ম্যানেজ করছেন?
মো. শফিউল আলম: প্রায় দুই বছর ধরে এই সুবিশাল প্ল্যাটফর্মটিতে ১০জন ডেভেলপার কাজ করেছে। আমাদের ইউআই, সফটওয়ার আর্কিট্যাক্ট, কোডিং, ডেভেলপমেন্ট, সিকিউরিটি, অনলাইন পেইমেন্ট, সার্ভার তৈরি করেছে আমাদের দেশের প্রোগ্রামারাই। তাদের প্রায় সবারই গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।

সরকার থেকে আপনারা কি ধরণের সহযোগিতা আশা করছেন?
মো. শফিউল আলম: আমরা তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে এ বিষয়ে কয়েকটি মিটিং করেছি। সেখানে আমরা বিল্যান্সারের ক্রমবিকাশের জন্য সরকারকে কাছে দশটি বিষয়ে প্রস্তাব করেছি। আইসিটি ডিভিশন সমর্থিত মার্কেটপ্ল্যাস, নন-টেন্ডারিং প্রকিউরম্যান্ট বিল্যান্সারে পোস্ট করা, ই-কন্টেন্ট তৈরী করা, বিল্যান্সার একাডেমি, অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার এবং এমপ্লয়ার সাপোর্ট সেন্টার, আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপনে সহযোগিতা করা, সরকারী উদ্দোগে তৈরীকৃত ফ্রিল্যান্সারদের নিবন্ধনকরন, ন্যাশনাল স্কিল ডেইটাবেইস, লোকাল ট্রেড এসোশিয়েশন বা চেম্বারগুলির মাঝে সংযোগ স্থাপন এবং ওমেন এনগেজম্যান্টের ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছি।

সাধারণ মানুষের মধ্যে বিল্যান্সারের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কী ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন?
মো. শফিউল আলম: আমরা ইতোমধ্যেই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিল্যান্সার কমিউনিটি’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটা প্রাথমিক অবস্থায় বিভাগ ভিত্তিক চলবে। এরপর জেলা ভিত্তিক সবগুলো জেলায় এই কমিউনিটি গড়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ করবে। এছাড়া আমরা অনলাইনে ট্রেনিং করাকে বেশি ফোকাস করতে চাই। সরকারিভাবেও এ ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা কামনা করছি।

আপনাদের প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলো কি কি?
মো. শফিউল আলম: আপনাদের প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রথম তিন মাসের মধ্যে এক হাজার জব পোস্ট করা, তিন হাজার টপ স্কিল ডেটাবেজ তৈরি করা এবং তিন শত জব পোস্ট সফলভাবে সমাপ্ত করা। আমরা আশা করছি আমাদের টার্গেটের চেয়ে অর্জন বেশি হবে।

আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মো. শফিউল আলম: আমাদের প্রাথমিক টার্গেট হচ্ছে লোকাল মার্কেট ডেভেলপ করার পাশাপাশি ব্যাপক পরিকল্পনার মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল এপ্লয়ারদেরকে সংযুক্ত করা। ইতিমধ্যে এই ফিল্ডে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এখন স্ট্যাট্রেজি এবং প্লানিং লেভেলে কাজ করছি। এটার ফিজিবিলিটি, মার্কেট ট্রেকশন, মার্কেট কম্পিটিশন, ইউএসপি তৈরি করছি। আমরা হয়তবা স্কিল প্রোফাইলকে ক্যাটাগরাইজ করে ইন্ডাস্ট্রি লিঙ্কেইজ করব। যেখানে হাই-স্কিল্ড এবং লো-স্কিল্ডকে ব্লেন্ড করে ইউএসপি ম্যাট্রিক্স তৈরি করে বিদেশি বায়ার অ্যাট্রাক্ট করা হবে। তাছাড়া আমরা সরকারের সহযোগিতা এবং মতামতের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সাথে বাই-লিটারিয়াল করে কাজ আউটসোর্স করতে আক্রিস্ট করব। আমাদের কিন্তু ইতিমধ্যে একটা পজিটিভ ব্র্যান্ডিং করে রেখেছে আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা। আমরা কিন্তু কাজ পাচ্ছি এবং আমরা সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে থেকে তা প্রমান করেছি। যদিও পুরো প্লানটা এখনো হাই-লেভেল স্টেইজে আছে। আপনারা সময়ের সাথে সাথে বিষয়গুলো দেখতে পারবেন।

[এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে https://belancer.com/ ঠিকানায় অথবা ফেসবুকের https://www.facebook.com/belancers ঠিকানায় যোগদান করতে পারেন।]