প্রাথমিকে ৬৩ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৩ হাজার ও প্রধান শিক্ষকের প্রায় ২০ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় শূন্য পদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পদোন্নতি নিয়ে জটিলতার কারণে ২০০৯ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক ও ২০১৪ সাল থেকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্যানেলভুক্ত শিক্ষক এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সৃষ্ট সহকারী শিক্ষক পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা—এ দুই প্রক্রিয়ায় প্রায় ২৮ থেকে ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক সংকট থেকেই যাবে বলে জানা গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সহকারী শিক্ষকের দুই লাখ ৯০ হাজার ৬০০ পদের মধ্যে দুই লাখ ৪৭ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৬০০টি। এ হিসাব গত ১৪ জুন পর্যন্ত। প্রধান শিক্ষকেরও  প্রায় ২০ হাজার পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো সরকারি বিদ্যালয়ে ছয় হাজার এবং ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হওয়া প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪-১৫ হাজার বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ সহকারী শিক্ষকের মধ্য থেকে পদোন্নতি এবং ৩৫ শতাংশ নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে পূরণ করা হয়।

২০০৯ সালে সহকারী শিক্ষকদের করা রিটের জের ধরে বন্ধ ছিল প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। গত বছরের মার্চে ওই রিটের নিষ্পত্তির পর বাধা কেটে যায়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই আবারও রিটের কারণে আটকে গেছে পদোন্নতি। গত মার্চে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে সাবেক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের করা একটি রিটের কারণে পদোন্নতির ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় এই নিয়োগের দায়িত্ব সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) হাতে চলে গেছে। গত মার্চে পাঁচ হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের চাহিদাপত্র দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বিলম্ব হচ্ছে।

দেশের সরকারি বিদ্যালয়গুলোয় প্রায় চার লাখ শিক্ষক পদের মধ্যে ৬৩ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। ডিপিইর তথ্য মতে, প্রতিদিন ২০০ জন শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। তার বিপরীতে নিয়মিত নিয়োগ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, শিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ভীষণ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত শূন্য পদ পূরণ করা না হলে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়বে। প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়ার ফলে এ সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে বলে তিনি আশাবাদী। রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের দায়ের করা মামলার কারণেই প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছ।

সূত্র : কালেরকন্ঠ, ১৬ জুন, ২০১৬।