প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করেন: শিক্ষামন্ত্রী

Islamic education
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম উদ্বোধন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করেন। তার আন্তরিকতায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অতি দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, এ দেশে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কিছু চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার কথা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইসলাম ছাড়া অন্য কোন চিন্তা করেন নি। আগামী দিনে এই দেশের ক্ষমতা আলেম-ওলামাদের হাতে যাবে এবং নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৫-১৬ সেশনে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করায় গতকাল (রোববার) রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আযম কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত শুকরিয়া ও দোয়া মাহফিলে তারা একথা বলেন। মাদরাসা শিক্ষকদের একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংগঠনটির সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য (১), ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ আহসান উল্লাহ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভর্তির নোটিশ জারি করার মাধ্যমে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলো। অন্যান্য কার্যক্রমও এখন চলতে থাকবে। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এখন থেকে মাদরাসা শিক্ষার অনুমোদন, পাঠদান পদ্ধতি, কারিকুলাম তৈরি ও অনুমোদনসহ সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তিনি মাদরাসা শিক্ষকদের মাদরাসায় পড়াশুনার মান বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সারাবিশ্বে এখন প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। এজন্য মাদরাসা শিক্ষার্থীদের গুণগত মানের শিক্ষা দিতে হবে। যাতে তারা কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রতিযোগিতায় মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারে। ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম উগ্রবাদ বা মানুষ হত্যার ধর্ম না এবং এগুলোকে সমর্থন করে না। আর আলেম-ওলামাগণ শান্তির ধর্মের পক্ষে মানব কল্যাণের পক্ষে কাজ করবে এবং পথ দেখাবে। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়নের ইতিহাস স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, যখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলেম-ওলামাগণ বৈঠক করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়েছিলো, তখন বলা হয়েছিলো ৯৩ বছরের দাবি। আর এখন শতবছর পরে এই দীর্ঘ সংগ্রাম বাস্তবায়ন হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করেন। বর্তমান সরকারের সময়ে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা এক হাজার ৩০০ মাদরাসার ভবন তৈরি করেছি, আগামীতে আরও ২ হাজার স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করা, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, ৩৫টি মডেল মাদরাসা স্থাপনসহ নানা অর্জনের কথা তুলে ধরেন। শুকরিয়া ও দোয়া মাহফিলে আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার কথা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলাম ছাড়া অন্য কোন চিন্তা করেননি। এই দেশে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কিছু চিন্তা করার সুযোগও নেই। কারণ সমাজে খুন-ধর্ষণ যেভাবে বাড়ছে এজন্য একটা দর্শন প্রয়োজন। এই দর্শন হবে ইসলামী দর্শন। এর জন্য আলেমদের সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য, দক্ষ, সৎ ও মেধাবী মানুষ তৈরির মাধ্যমে এই দর্শন বাস্তবায়নে কাজ করবে। যার মাধ্যমে সমাজে একটি রেনেসাঁ তৈরি হবে এবং নেতৃত্ব যাবে আলেম-ওলামা ও ইসলামী জ্ঞানে শিক্ষিত ব্যক্তিদের হাতে। আগামী দিনে এই দেশের ক্ষমতা আলেম-ওলামাদের হাতে যাবে এবং নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি বলেন, সমাজের প্রয়োজন উপলব্ধি করে বৈরী পরিবেশের মধ্যে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একটি বিরাট অর্জন হয়েছে। ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা ২০১৯ সালে অনার্স শেষ করে বের হবে। এই বিশাল ইসলামি শক্তি সমাজকে নেতৃত্ব দেবে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সমাজের জন্য আলেম-ওলামাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শতভাগ মুসলমান থাকার পরও সংঘাত-সংঘর্ষ বেশি হচ্ছে। আর আমাদের এখানে ৯২ ভাগ মুসলমান থাকলেও কোন ধরণের সংঘাত ও সংঘর্ষ নেই। অনেক দল ও মত রয়েছে তবে মাদরাসা শিক্ষার বিষয়ে সকলেই একমত। অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরী মুসলমান অভিবাসীদের গ্রহণ করতে চাচ্ছে না, কারণ তারা মুসলমানদের ভয় পাচ্ছে উগ্রতা ছড়াতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষদের নিয়ে উগ্রতার কোন কথা কেউ বলছে না। বাংলাদেশ স্থিতিশীল রয়েছে আলেম-ওলামাদের কারণে। এই অঞ্চলের মানুষ সহনশীল এটা হয়েছে তাদের মাধ্যমেই। আগামী দিনে সুনিশ্চিতভাবে এই আলেমদের হাতেই ক্ষমতা আসবে। আর এই নেতৃত্ব যেনো সুশিক্ষিত ও সঠিক ব্যক্তির হাতে যায় এজন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দিনে মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সরকার বা রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তন হলে ব্যানার পরিবর্তন হবে। কিন্তু কাজের মাধ্যমে মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারলে সারাজীবন থেকে যায়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দেশের আলেম-ওলামাদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান ইসলামী শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সকল ক্ষেত্রে পাশে থাকার এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বজলুল হক হারুন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলা হতো ইসলাম ধ্বংস হবে, ইসলাম থাকবে না। কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন শেখ হাসিনার সরকারের মাধ্যমেই ইসলামের কাজ হবে। শেখ হাসিনার চিন্তায় সব সময় ইসলামই থাকে। ইসলামের বিকল্প কোন কিছু তার কাছে নাই। তিনি বলেন, আলিয়া মাদরাসায় জঙ্গি সৃষ্টি করা হয় না। যারা জঙ্গি সৃষ্টি করছে তারা ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আলিয়া মাদরাসা থেকে এমন মানুষ বের হচ্ছে যারা আগামী দিনে এই দেশকে নেতৃত্ব প্রদান করবে। এসময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ আহসান উল্লাহ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী। উপস্থিত ছিলেন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফ উল্যা, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মোঃ মনিরুল ইসলাম, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ড. মাহবুবুর রহমান, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা শাহ মোঃ মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, ড. সৈয়দ শরাফত আলী, অধ্যক্ষ মাওলানা নজমুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।