পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাচ্ছে সরকারি কলেজগুলো

সেশনজট হ্রাস ও শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি কলেজগুলোকে (অনার্স চালু আছে এমন) সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

এর ফলে অ্যাফিলিয়েটেড বিশ্ববিদ্যালয়- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হারাচ্ছে ১৮১টি সরকারি কলেজ এবং প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী। এদের দেখভালের দায়িত্ব আবার ফিরে যাচ্ছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর।

এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আট সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউজিসির সদস্য মহব্বত খানকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে রয়েছেন ইউজিসির সদস্য আবুল হাশেম, ইউজিসির সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সদস্যসচিব হচ্ছেন ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক ফেরদৌস জামান। গত ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী। বৈঠকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সরকারি কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে নেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত সুবিধা ও জনবল বৃদ্ধির তাগিদ দেন। কেবল দুজন উপাচার্য এ নিয়ে আরো ভাবনাচিন্তার তাগিদ দেন। এর মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। এই অবস্থায় কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নেওয়ার আগে আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা উচিত। খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘আগে তো কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ছিল। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হলো, এটা কেন সফল হলো না সেটা বুঝতে হবে। দ্বিতীয়বার যেন আমরা ভুল না করি।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশীদ বলেন, দীর্ঘদিনের সেশনজট ও কলেজগুলোর শিক্ষার মান পড়ে যাওয়া এখন বাস্তবতা। এই অবস্থায় দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছর আট মাসে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তিনি তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিভিন্ন কলেজের একুশ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। এখন ১৩ লাখ শিক্ষার্থী চলে গেলে বাজেট সংকটে পড়বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার মান যে পর্যায়ে নেমেছে তাতে শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতেই হবে। সুযোগ-সুবিধা আছে কি না তার বালাই নেই, কলেজে অনার্স-মাস্টার্স খোলাটা যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন শিক্ষক নিয়ে একটি বিষয় খোলা হচ্ছে অথচ চার বছরের অনার্সে কোনো ক্লাস হচ্ছে না। এ অবস্থায় অনার্স-মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে এমন কলেজগুলোকে অবশ্যই টিচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আনতেই হবে।