নিয়োগের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও

বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্যানেলভুক্ত সবাইকে নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে আবারো রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও করেছেন নিয়োগবঞ্চিতরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা অধিদপ্তর ঘেরাও করে মূল ফটকে অবস্থান নেন। নিয়োগ বঞ্চিত প্যানেল শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে সারাদেশ থেকে সহস্রাধিক শিক্ষক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন করেন প্যানেলভুক্ত শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি শূন্য পদ নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে প্যানেলভুক্ত সবাই নিয়োগ পাচ্ছেন না। তাঁরা আদালতের রায় অনুযায়ী নিয়োগের দাবিতে অধিদপ্তর ঘেরাও করেছেন। তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কার্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্যানেলভুক্ত প্রার্থী আছেন প্রায় ২৮ হাজার। কিন্তু শূন্য পদের জটিলতায় বড়জোর ১৫ থেকে ১৬ হাজারের মতো নিয়োগ হতে পারে। বাকিদের আপাতত নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর গত সপ্তাহে বলেন, এখন মেধাক্রম অনুযায়ী শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পরে যদি পদ শূন্য হয়, তখন বাকিদের শূন্য পদ সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়া হবে।

হাইকোর্টের নির্দেশে সদ্য জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘শূন্যপদে’ প্যানেল প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গত ৬ জুন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্যানেল থেকে নিয়োগের জন্য প্রায় ২৩ হাজার প্রার্থী নিয়োগের অপেক্ষায় থাকলেও এদের নিয়োগে শূন্যপদের শর্ত জুড়ে দেওয়ায় সবাইকে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে প্যানেল প্রার্থীরা ক্ষোভ জানিয়ে আদেশ সংশোধনের দাবি জানান।

শূন্য পদের বাইরেও অন্য পদগুলোতে প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে গত বৃহস্পতিবার নতুন আদেশ জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি (নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা ও কল্যাণ) নীতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। ওইসব বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল ৪২ হাজার ৬১১ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্য থেকে ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত ১০ হাজার ৫১৪ জন নিয়োগ পান।

২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ হাজার ৯৯৫টি রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করেন। ওইসব বিদ্যালয়েই প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগের কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায় বেশিরভাগ রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলে প্যানেলে থাকা বাকিদের নিয়োগ ঝুলে যায়। এরপর আন্দোলনে নামেন এসব প্রার্থীরা।

দীর্ঘ দিন আন্দোলনে কাজ না হওয়ার প্রথমে প্যানেলভুক্ত ১০ প্রার্থী হাই কোর্টে রিট করে নিজেদের পক্ষে রায় পান। পরে এ বিষয়ে আরও ৪৯০টি রিট আবেদন হাই কোর্ট নিষ্পত্তি করে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয়।

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজের পর পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা রিভিউ আবেদনও গত ১১ ফেব্রুয়ারি খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই প্যানেলে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের পথ খোলে।