নিয়োগ পরীক্ষার খবর নেই; রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৩০ লাখ চাকরিপ্রার্থীর আবেদন

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ৮২০ জন কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য এক বছর আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি)। ২ লাখ ৭৪ হাজার আবেদন পড়ে। নিয়োগ দূরে থাক, কবে নিয়োগ পরীক্ষা হবে, তা-ই এখনো অনিশ্চিত। একই সময়ে ঘোষণা করা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদের নিয়োগ পরীক্ষারও খবর নেই। এ দুটি পদে আবেদন পড়েছে প্রায় ৫ লাখ।

কেবল সোনালী ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, অগ্রণী, কৃষি, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে কমপক্ষে ২৫ ধরনের পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলোতে ৭ হাজার ২৬২টি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে প্রায় ৩০ লাখ। কিন্তু কোনোটিরই নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়নি।

বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনবলের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাজকর্মে সমস্যা হচ্ছে। রূপালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জনবল চেয়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি গঠন করা হয়। আশা করা হয়েছিল, এতে ব্যাংকগুলোর নিয়োগ-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত ও স্বচ্ছ হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন উল্টো দীর্ঘসূত্রতায় আটকে পড়েছে নিয়োগ-প্রক্রিয়া।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, বিএসসি গঠনের পরপরই পুরোনো পরীক্ষাগুলো শেষ করার দায়িত্ব পড়ে তাদের ওপর। এ ছাড়া নতুন পরীক্ষা নিয়ে কয়েকটি মামলা আছে। এসব কারণেই দীর্ঘসূত্রতা। এ ছাড়া মাত্র ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চলছে বিএসসি। তবে খুব শিগগির নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে বলে আশা করছে বিএসসি।
বিজ্ঞপ্তি আছে, পরীক্ষা নেই

সোনালী ব্যাংকের তিন পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ৭০১টি পদের বিপরীতে ২ লাখ ৬০ হাজার ১১২, কর্মকর্তার ৮২০টি পদে ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৩ এবং কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৮ জন আবেদন করেন। এখনো পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। বিএসসি বলছে, মামলার কারণেই সোনালী ব্যাংকের নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইও), সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা (এইও) এবং এইও-আরসি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১০ মার্চ। ইওর ৮৩৪টি পদের জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭ জন, এইওর ৪৬৪টি পদের জন্য ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬৫টি এবং এইও-আরসির ৩৯৫টি পদের জন্য ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৫ জন আবেদন করেন।

রূপালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ৪২৩টি পদের জন্য ২৬ জুলাই আবেদন আহ্বান করা হয়। ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮৩৯ প্রার্থী আবেদন করেন। ৩ আগস্ট কর্মকর্তা পদের বিজ্ঞপ্তি দিলে ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৪ জন আবেদন করেন।

অগ্রণী ব্যাংকের ১১ ধরনের ৮৪০টি পদের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় গত জুন থেকে নভেম্বরে। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে ২ লাখ ৩ হাজার এবং কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮৬ জন আবেদন করেন। বাকি নয়টি কারিগরি পদ। জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভবিষ্যতে বিএসসি সমন্বিতভাবে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করছে। প্রতিবছর ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো শূন্য পদের সংখ্যা জানাবে এবং এর ভিত্তিতে বিএসসি জনবল নিয়োগ করবে। তিনি বলেন, ‘কিছুটা বিলম্ব হলেও আমরা যোগ্য জনবল পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা পদের জন্য গত ১১ মে বিজ্ঞপ্তি দিলে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫ প্রার্থী আবেদন করেন। ২৪ আগস্ট কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদের বিজ্ঞাপন দিলে ২ লাখ ৯ হাজার ৯৬৪ প্রার্থী আবেদন করেন।

এসব ব্যাংকের এসব পদে নিয়োগের পরীক্ষার তারিখ এখনো দেওয়া হয়নি। তবে কৃষি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। ১৭১টি পদের জন্য গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৪১ জন আবেদন করেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ৮২টি পদের জন্য ১৯ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের ৯০টি পদের জন্য ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ৫০টি এবং কর্মকর্তার ৩৬টি পদে এ বছরের জানুয়ারিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ এখনো না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সোনালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে আবেদনকারী রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন থেকে স্নাতক করা সুমাইয়া জান্নাতসহ কয়েকজন। তাঁরা বলেন, এই দীর্ঘসূত্রতা কতটা যন্ত্রণার, সেটা নিয়োগকারীরা বুঝবেন না। বিএসসি সূত্র বলেছে, মামলার কারণে সোনালী, রূপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। তবে ২৪ মার্চ একটি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদের নিয়োগ পরীক্ষা হবে।

বিএসসির সদস্যসচিব মোশাররফ হোসেন খান প্রথম অলোকে বলেন, ‘পুরোনো পরীক্ষা আর মামলার কারণে কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। তবে ট্রেন এখন লাইনে উঠে গেছে। আমরা আশা করছি, দ্রুতই একের পর এক পরীক্ষা শুরু করতে পারব। এ জন্য কার্যাদেশ দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সব ব্যাংক থেকে চাহিদা নিয়ে একই ধরনের পদে একটি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মামলা বা অন্য কোনো কারণ দেখিয়ে এ ধরনের দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। লাখ লাখ ছেলেমেয়ে চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উচিত দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা।

সূত্র: প্রথম-আলো