নতুন কৌশলে প্রশ্নপত্র ফাঁস!

question.flashnews_8422

পাবলিক পরীক্ষায় নতুন কৌশলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। আগে পরীক্ষার দু-এক দিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো। এখন একশ্রেণির অসাধু শিক্ষক পরীক্ষা শুরুর এক-দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্রের সিলগালা প্যাকেট খুলে তা বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

চলতি উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা চলাকালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা ঢাকা ও টঙ্গীতে এ রকম দুটি ঘটনা হাতেনাতে ধরেছেন। আরও কিছুসংখ্যক কেন্দ্রে এ রকম ঘটনার অভিযোগ পেয়েছে শিক্ষা বোর্ড।

সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার রাজধানীর বি এ এফ শাহীন কলেজ কেন্দ্রে। এখানে নির্ধারিত সময়ের আগেই রসায়ন দ্বিতীয় পত্রের বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বি এ এফ শাহীন কলেজের রসায়নের প্রভাষক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ।

জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি প্রথম আলোকে স্বীকার করেছেন। কথা বলার সময় তিনি ওই থানায় ছিলেন বলেও জানান।

তবে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এ রকম মামলা বা অভিযোগ হলে জানতে পারবেন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পাবলিক পরীক্ষার নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে সিলগালা প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার নিয়ম। কিন্তু তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন, কিছু কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষার দিন সকাল সকাল প্রশ্নপত্রের সিলগালা প্যাকেট থানা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর পরীক্ষার কেন্দ্রে এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগেই সেগুলো খুলে ফেলা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় হাতে লিখে কিংবা মুঠোফোনে প্রশ্নের ছবি তুলে ই-মেইল বা ভাইবারে তা বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন একশ্রেণির শিক্ষক। যা পরীক্ষার্থীরা পেয়ে সহজেই উত্তর জেনে পরীক্ষার হলে ঢুকছে।

বর্তমানে প্রশ্নপত্রের দুই ভাগে একটি পরীক্ষা হয়। প্রশ্নপত্রের একটি অংশ সৃজনশীল (সিকিউ) ও আরেকটি অংশ বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ)। এমসিকিউ প্রশ্ন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সমাধান করার সুযোগ থাকায় নতুন কৌশল এতে বেশি কার্যকর হচ্ছে। এ ছাড়া সিকিউ প্রশ্নপত্র এক-দেড় ঘণ্টা আগে পাওয়া গেলে তাও সহজে উত্তর তৈরি করা সহজ বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক। বর্তমানে এক প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা হয় আরেক প্রতিষ্ঠানে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও টাকার বিনিময়ে এ রকম ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কিছু দিন ধরেই এ রকম অভিযোগ পাচ্ছিলেন। এ রকম একটি অভিযোগ পেয়ে ২০ মে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) তপন কুমার সরকার সকালে রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে বিদ্যালয় শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক মশিউল ইসলাম ও অফিস সহকারী আবুল হোসেনকে সৃজনশীল প্রশ্ন বাছাই করতে দেখেন। পরে তিনি পাশে থাকা বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্নের প্যাকেটও খোলা দেখতে পান। প্যাকেটগুলো যাচাই করে প্রতি সেট থেকে একটি করে প্রশ্নপত্র কম পান তিনি। অথচ বহুনির্বাচনী পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার নিয়ম। ওই সময় উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার রসায়ন প্রথম পত্র বিষয়ের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের প্রতি সেটের (ক, খ, গ ও ঘ) একটি করে প্রশ্নপত্র কম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রথম পত্র বিষয়ের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের ক সেটের দুটি প্রশ্নপত্র কম পান। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানতে পারেন, সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রভাষক আবদুল্লাহ আল আনসার থানা থেকে সিলগালা করা প্রশ্নের প্যাকেট কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। পরে সরিয়ে ফেলা প্রশ্নপত্রগুলো উদ্ধারের জন্য অধ্যক্ষকে সময় দিলেও অধ্যক্ষ প্রশ্নগুলো উদ্ধার করতে পারেননি। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বাদী হয়ে পরদিন ২১ মে টঙ্গীর ওই কলেজের দুই শিক্ষক এবং এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় মামলা করেন।
জানতে চাইলে শ্রীকান্ত কুমার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

কয়েক বছর ধরেই এসএসসি, এইচএসসি, জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এবারই শোনা যাচ্ছে।