ঢাবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

সাত সরকারি কলেজ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।

প্রতিবাদ লিপিকে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত সাত সরকারি কলেজ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনোরূপ বক্তব্য বা মন্তব্য না করার নীতি এ পর্যন্ত অনুসরণ করে আসছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাবির নিকট তাদের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন এবং তাকে কেন্দ্র করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রক্টর পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে সরকার ২০১৪ সাল থেকে ঢাকা শহরের সরকারি কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করার চিন্তাভাবনা করে। তখন থেকেই এ সম্পর্কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থান ছিল ‘শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে’। সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তা শুধু সমর্থনই নয়, বাস্তবায়নেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এটি কার্যকর করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে নানা জটিলতা, প্রস্তুতি নিহিত থাকায়, তখন থেকে এ সম্বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি পর্যায়ে বহু সভা, কমিটি গঠন ইত্যাদি হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপর্যুপরি তাগিদ ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় এ বছরের ১৬ জানুয়ারি তার (ঢাবি’র উপাচার্য) সভাপতিত্বে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সভায় ‘৭টি কলেজ এখন থেকে ঢাবি’র সঙ্গে অধিভুক্ত হলো’ মর্মে সিদ্ধান্ত হয় (যদিও সংসদ কর্তৃক প্রণীত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ তখনো বহাল এবং এখন পর্যন্ত কোনো সংশোধন করা হয়নি)। অতএব ‘হঠাৎ করে সাতটি কলেজের দায়িত্ব আমাদের ওপর দেয়ায় অনেকটা চাপ অনুভূত হচ্ছে’, ঢাবি উপাচার্যের এ বক্তব্যও তথ্যভিত্তিক নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাত কলেজের অধ্যক্ষদের ওই সভায় সাতটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের দায়-দায়িত্ব ঢাবি’র, কোনো বর্ষের শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে থাকলে তাদের মৌখিক পরীক্ষা, প্র্যাকটিক্যাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করবে এবং ফলও প্রকাশ করবে। তাদের এ সিদ্ধান্তের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ করে চলে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কার্যক্রম অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থায় ঢাবি কর্তৃপক্ষের উল্লেখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতদূর সুবিবেচনাপ্রসূত হয়েছে’ সে প্রসঙ্গও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তোলা হয়নি। পরে যেন কোনোরূপ অসহযোগিতার কথা না ওঠে, তা ভেবে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ‘ঢাবি’র সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ছয় মাস পর সংশ্লিষ্ট সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নামলে এখন ঢাবি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কয়েকদিন ধরে বলা হচ্ছে, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহযোগিতার কারণে পরীক্ষার তারিখ ও পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে দেরি হচ্ছে’ ‘৫ মাস পূর্বে তথ্য চেয়েও তা পাওয়া যায়নি’, ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের সেশনজট’ নিয়ে এসেছে ইত্যাদি।’

এসব অভিযোগের কোনোটিই সঠিক নয় উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে উল্লেখিত বা কাছাকাছি সময়েরও সেশনজট ছিল না। কোনো কোনো বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার অনেকটাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছিল কিন্তু ঢাবি’র ১৬ জানুয়ারির সিদ্ধান্তের কারণে তাদের বাকি পরীক্ষা সম্পন্ন করে ফল প্রকাশ করতে পারেনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে ঢাবি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৭ মার্চ ২০১৭, ৫ এপ্রিল ২০১৭, ৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৩ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে তথ্য চেয়ে পত্র পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ২০১৫ এর ফরম পূরণের ডাটা, ২০০৯-২০১০, ২০১০-২০১১, ২০১১-২০১২ ও ২০১২-২০১৩ সেশনের রেজিস্ট্রেশন ডাটা, কলেজ টেবিল, কোর্সের ডাটা, ডিগ্রি প্রাইভেট ২০১১ সালের রেজিস্ট্রেশন ডাটা (পুরাতন সিলেবাস), ডিগ্রি প্রাইভেট ২০১২ সালের রেজিস্ট্রেশন ডাটা (পুরাতন সিলেবাস), ডিগ্রি প্রাইভেট ২০১৩ সালের রেজিস্ট্রেশন ডাটা (পুরাতন সিলেবাস), ডিগ্রি রেগুলার ২০১০-২০১১ সালের রেজিস্ট্রেশন ডাটা (পুরাতন সিলেবাস), ডিগ্রি রেগুলার ২০১১-২০১২ সালের রেজিস্ট্রেশন ডাটা (পুরাতন সিলেবাস), ডিগ্রি রেগুলার ২০১২-২০১৩ সালের রেজিস্ট্রেশন ডাটা (পুরাতন সিলেবাস), ডিগ্রি ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুরাতন সিলেবাসের ফরম পূরণের ডাটা, ডিগ্রি ২০১৬ সালের প্রথম বর্ষ ফরম পূরণের ডাটা (নতুন সিলেবাস), ডিগ্রি সাবজেক্ট ফাইল (পুরাতন সিলেবাস), ডিগ্রি সাবজেক্ট ফাইল (ডিগ্রি নতুন সিলেবাস), অনার্স পার্ট-৩ ২০১৫ এর ফরম পূরণের ডাটা, অনার্স পার্ট-৩ সাবজেক্ট ফাইল, মাস্টার্স ২০১৪ পর্যন্ত ফরম পূরণের ডাটা (মাস্টার্স নতুন সিলেবাস), মাস্টার্স ২০১৪ সাল পর্যন্ত অনিয়মিত স্টুডেন্টের ফরম পূরণের ডাটা (মাস্টার্স পুরাতন সিলেবাস), মাস্টার্স ২০১৪ সাবজেক্ট ফাইল (মাস্টার্স নতুন সিলেবাস), মাস্টার্স ২০১৪ অনিয়মিত স্টুডেন্টের সাবজেক্ট ফাইল (মাস্টার্স পুরাতন সিলেবাস), স্টুডেন্ট টাইপ (কমন ফাইল) এসব তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরবরাহ করা হয়। চলতি মাসের ৪ তারিখ তথ্য চেয়ে ঢাবি’র পক্ষ থেকে সর্বশেষ চিঠি পাওয়া যায় যাতে ৭টি কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সকল টেবুলেশন শিট, নম্বর ও উত্তরপত্র চাওয়া হয়, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে- ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে যদি তথ্য না-ই পাওয়া গিয়ে থাকে, তাহলে এখন ঢাবি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার রুটিন দিচ্ছেন কিভাবে? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার: সরকারের নীতি বাস্তবায়ন এবং শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। সংশ্লিষ্টদের প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বান-আমরা সবাই যেন ‘স্কেপগোট’ না খুঁজে দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করি, বিবেক দ্বারা তাড়িত হই, সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি।’

সূত্রঃ ঢাকাটাইমস২৪ ডট কম