চাকরির মুকুট আপনারই হবে!

যেকোনো চাকরির ইন্টারভিউ বা মৌখিক পরীক্ষা দেন না কেন প্রথমেই আপনার নিজের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। মনে রাখবেন দুনিয়ার যেখানেই ইন্টারভিউ দিতে যান না কেন, এই প্রশ্নটি আপনাকে অবশ্যই করা হবে। তাই বলতে পারেন এটা এক রকম ফাস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন। আপনি যে পোস্টে আবেদন করেছেন কথা বলতে হবে ওই পোস্ট মাথায় রেখে। আপনি মানুষ একজন কিন্তু রূপ হবে অনেক রকম। অাসুন জেনে নেই নিজের সম্পর্কে কী বলবেন আপনি।

বিক্রয় প্রতিনিধি হতে চাইলে
ধরুন, আপনি ফ্রেসার। অ্যাপ্লাই করেছেন কোনো একটি কোম্পানির ‘বিক্রয় প্রতিনিধি’ পদের জন্য। সেক্ষেত্রে আপনার উত্তর হবে, ‘স্যার আমি সামি। আমি ছাত্রাবস্থায় আমার ইউনিভার্সিটিতে একটি (নামও বলা যায়) কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলাম। ট্রেনিং করার মাধ্যমে কীভাবে ছাত্রাবস্থায়ই কর্মজীবনের জন্য অগ্রসর হওয়া যায়- সেই বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতাম। আমার ভার্সিটিতেই আমি ওই কোম্পানিকে প্রায় ১০০ ক্লায়েন্ট এনে দিয়েছি মাত্র ৩ মাসে। ভার্সিটির ট্যুরিস্ট ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ছিলাম। আমি ৩৫টি জেলা ঘুরেছি। আমি মানুষের সঙ্গে মিশতে, তাদের জীবন যাপন সম্পর্কে জানতে খুব পছন্দ করি। আমি খেলাধুলায় খুব ভালো। কলেজে থাকতে আমাদের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম আমি।’

এমন উত্তর কেন করবেন  
দেখুন, আপনি ফ্রেসার। অভিজ্ঞতা অর্জন করাই আপনার বড় চ্যালেঞ্জ। চাকরির ক্ষেত্রে একজন রিক্রুইটার বেছে নিতে চায় একজন সেরা কর্মী। যেহেতু আপনি সেলসের জন্য আবেদন করেছেন সেহেতু আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি ভবিষ্যতেও ভালো সেলস করতে পারবেন। আপনিই উপযুক্ত প্রার্থী। খেয়াল করুন, আপনি একটি কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। মানে আপনি প্রোডাক্ট প্রমোশনের কাজ আগে থেকেই জানেন। আপনি লোকজনের সাথে মিশতে পারেন কারণ ওই কোম্পানির হয়ে আপনি প্রচারকাজ করতেন। আপনি ১০০ ক্লায়েন্ট এনেছেন, তার মানে আপনি টার্গেট পূরণ করতে পারেন। আপনি ৩৫টি জেলা ঘুরেছেন। সেলস পেশায় ট্রাভেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি খেলাধুলায় ভালো, মানে আপনি পরিশ্রমী। আপনি ক্যাপ্টেন ছিলেন। মানে, আপনি নেতৃত্ব দিয়ে যেকোনো দল পরিচালনার ক্ষমতা রাখেন। মনে রাখবেন, রিক্রুইটার কাজের লোক খুঁজছে, পিতা-মাতার নাম বা বিয়ের সার্টিফিকেট নয়।

মানবসম্পদ বিভাগে আবেদন করলে
একই ব্যক্তি মানবসম্পদ বিভাগে আবদেন করলে তখন একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হত কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে। আপনি বলবেন, ‘স্যার আমি সামি। আমি ছাত্রাবস্থায় আমার ইউনিভার্সিটিতে একটি (নামও বলা যায়) কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলাম এবং তাদের কাস্টমার হ্যান্ডেল করতাম। তাদের ১০০ কাস্টমারের সঙ্গে আমাকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হত। আমি ভার্সিটির ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য ছিলাম। দল গোছানো ও নিয়মমাফিক ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করতাম। ক্লাব থেকে আমরা ভার্সিটিতে একবার ফায়ার ফাইটিংয়ের উপর ট্রেনিং করিয়েছিলাম। আমি দেশের ৩৫টি জেলায় ঘুরেছি, ভিন্ন ভিন্ন আচরণের মানুষ ও তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে, মানিয়ে নিয়ে চলা আমার খুবই পছন্দের। আমি কলেজে থাকতে যখন ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম, তখন হঠাৎ একদিন আমার দুই টিম মেম্বার বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে মিমাংসা করে দেই। আমি মানুষের আচার-আচরণের বৈচিত্র্য খুব পছন্দ করি ও মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে চাই কোনো বড় লক্ষ্যকে সামনে রেখে।’

পরিবর্তনটা লক্ষ্য করুন
খেয়াল করে দেখুন, একই লোক, একই তার জীবন, কিন্তু কথাবার্তাগুলো কেমন পরিবর্তণ। বিক্রয় থেকে সোজা পিপল ম্যানেজমেন্ট। এখন এই লোকটিই যখন প্রডাকশনের জন্য ইন্টারভিউ দিবে তখনও তাকে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। আপনি কোন পেশায় যাবেন সেটা নির্ভর করে আপনার পড়াশোনা, রেজাল্ট, কো-কারিকুলাম আক্টিভিটিজের উপরে।

ভেবে সিদ্ধান্ত নিন
প্রথম চাকরি মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবুঝের মত ‘আমাকে যেকোনো কাজ দিন, আমি যেকোনো কাজ করবো’- এরকম বলবেন না। ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। আপনার কী ভালো লাগে? কীভাবে আপনি জীবন গড়তে চান? কোন কাজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ছাত্রজীবন থেকে নিজেকে ওইভাবে গড়ুন। নিজেকে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরুন। আপনি তৈরি হয়েই এসেছেন। চাকরির মুকুট আপনারই হবে। নিজেকে কখনোই দুর্ভাগা ভাববেন না। ‘সুপারিশ ছাড়া চাকরি হয় না’- এই ধারণা মাথা থেকে ফেলে দিন। মনে রাখবেন, হীরা যেখানেই ফেলে রাখা হোক না কেন, সে তার উজ্জ্বলতা ছড়াবেই। আপনিও আজ থেকে নিজেকে গড়ে তুলুন সেই উজ্জ্বল হীরা হিসেবে।

যারা চাকরিজীবী
যারা চাকরি করছেন তারাও একই ভাবে নাম বলে সরাসরি চলে যাবেন কাজের কথায়। কোথায় কোন প্রজেক্ট করেছেন? কী কাজ করেছেন? কোথায় কোন টিমে লিড দিয়েছেন? কি করেছেন? সব কথা এসবের মধ্যেই বলতে হবে। আপনার পরিচয় হবে কেবলই কাজ করার মনোভাবে। সব সময় আত্মবিশ্বাসী হোন। আপনিই সফল হবেন।

লেখক: ট্রেইনার ও প্রফেশনাল সিভি রাইটার, চিফ নলেজ ডিস্ট্রিবিউটর, কর্পোরেট আস্ক।