কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব বাড়ানোর পরামর্শ

মানবসম্পদ উন্নয়নে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার তাগিদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, তিন দশক ধরে ৪ থেকে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি অদক্ষ জনশক্তি। প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিতে হলে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। পরিধি বাড়াতে হবে কর্মমুখী শিক্ষার। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মানবসম্পদ খাত বিষয়ে আলোচনা সভায় বৃহস্পতিবার শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মীরা এসব কথা বলেন। এসময় শিক্ষা খাতে মোট দেশজ আয়ের (জিডিপি) ৪ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তারা।

Technical Education

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ফারজানা ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. খালেদা একরাম, অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম।

সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরিবর্তিত অর্থনীতির উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের একটা চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ২০০৯ সালে মোট ছাত্রছাত্রীর এক শতাংশ কারিগরি শিক্ষায় পড়াশোনা করত। এখন তা ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে তা ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান,মোট শিক্ষার্থীর ৫০ শতাংশকে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় আনা গেলে অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে। তবে কারিগরি শিক্ষায় যা পড়ানো হচ্ছে তা এখনও মানসম্মত নয়। এজন্য শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয় নির্বাহ নিজস্ব খাত থেকেই করা উচিত। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ৫০ শতাংশ খরচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করে থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে তা ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এসময় ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপক্ব গাছ কাটতে গেলে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করেন। পুকুর লিজ দিতে গেলে সবাই বলেন, পাখি আসবে না। এ অবস্থায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানো কঠিন। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সামরিক খাতে যে অনুপাতে বরাদ্দ দেয়া হয় শিক্ষা খাতে তা হয় না। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কোনো জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, অথচ সারা দেশে ১১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জরাজীর্ণ। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে জিডিপির ৪ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তিনি। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম ও বরাদ্দ কম। গবেষণা প্রকল্প নিয়ে এলে বরাদ্দ দেয়া হবে। গবেষণাই হলো দেশকে এগিয়ে নেয়ার চালিকা শক্তি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিগ্রি পাসের নিচে এখন আর কেউ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন না। এর সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা ঘোষণা করার সময় এসেছে। সভায় বীরেন শিকদার মানবসম্পদ উন্নয়নে ক্রীড়া ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান