এসএসসি ও এইচএসসি তে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকছে না

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় আবারও সংস্কার আনার চিন্তা-ভাবনা করছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকেই। এর অংশ হিসেবে স্কুল-কলেজে ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ (সিএ) পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর দক্ষতা মূল্যায়ন করে বিষয় শিক্ষক নম্বর দেবেন। এই পদ্ধতির পাইলটিং হবে জেএসসিতে। সফল বাস্তবায়ন হলে পরবর্তীতে এসএসসি-এইচএসসিতে ব্যবহারিক পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে।

বরাবরের মতোই এসব করা হবে বিশ্বব্যাংক অথবা এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের লোন করা টাকায়। বিদেশী পরামর্শকরা কোটি কোটি টাকা বেতন নিয়ে যাবেন, দেশীয় শিক্ষা ও প্রশাসন ক্যাডারের অফিসাররা বিদেশে ঘুরতে যাবেন। দেশের ভেতরে সব প্রশিক্ষণ হবে কক্সবাজার অথবা সিলেটের চা বাগানের কাছাকাছি। সরকারি কলেজ শিক্ষকরা তদবির করে প্রেষণে এসব প্রকল্পে পদায়ন নেবেন। দামী গাড়ীতে চড়বেন। মাঝে মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের জানান দেবেন তা কী কী সাফল্য অর্জন করেছেন। কাজের কাজ কিছু হোক বা না হোক কতিপয়তন্ত্রের হোতাদের আখের গোছানো হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানান, এই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আজ ১১ আগস্ট সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বসছে। শিক্ষাসচিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সভায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সরকারের বেতনভুক্ত বিদেশী বিশেষজ্ঞসহ শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা যোগ দেবেন।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত সিএ হচ্ছে ইতিপূর্বে ব্যর্থতার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া  স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন। ২০০৬ সালে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। তখন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এই পদ্ধতির আওতায় পাঠদান শুরু হয়। পদ্ধতি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের হাতে বিষয়প্রতি ৩০ নম্বর দেয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের ছয়টি দিক পর্যালোচনা করে এ নম্বর দেয়ার কথা ছিল। এগুলো হচ্ছে : শ্রেণী অভীক্ষা, নির্ধারিত কাজ, বাড়ির কাজ, মৌখিক উপস্থাপনা, শ্রেণীর কাজ ও দলগত কাজ। কিন্তু এসবিএ নানা কেলেংকারির মধ্যে পড়ে। একশ্রেণীর শিক্ষক এটি ‘ব্ল্যাকমেইল’র হাতিয়ার হিসেবে নেয়। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে নম্বর দেয়া হতো না। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীর সন্তানকে বেশি নম্বর দেয়া হতো। রোলনম্বর অনুযায়ী নম্বর দেয়ার নজিরও ছিল। যে কারণে তখন এসবিএকে মজা করে বলা হতো- ‘স্যারের বাসায় এসো’। এমন বাস্তবতায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়েই ২০১১ সালের পর থেকে এই পদ্ধতি স্কুল থেকে তুলে দেয়া হয়।

তখন ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এসবিএ শুরু হলেও জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এটি রাখা হয়নি। তবে এবার জেএসসিতে এসবিএ চালুর পরিকল্পনা আছে। সে অনুযায়ী ৭৫ নম্বরে কেন্দ্রীয় বা সমাপনী পরীক্ষা হবে। বাকি ২৫ নম্বর স্কুলে শিক্ষকের হাতে থাকবে।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক অফিসার জানিয়েছে, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও পাবলিক পরীক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এই বৈঠকে মূলত সেসব আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। প্রস্তাবের মধ্যে আছে, সিএ প্রবর্তন, পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্রে অভিন্ন নম্বর প্রদান, সমমানের প্রশ্ন তৈরি, জিপিএ পদ্ধতির উন্নয়ন, স্যাম্পল নাম্বারিং, প্রশ্ন প্রণয়ন পদ্ধতি, আন্তঃবিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ) বিষয় ভিত্তিক নম্বর বৈষম্য নিরসনের পথ বের করা (যেমন বিজ্ঞানের বিষয়ে সাধারণত বেশি নম্বর মেলে, কিন্তু মানবিকে যত ভালো লেখা হোক রসায়নের মতো ইতিহাসে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায় না) ইত্যাদি।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার উন্নয়নের ব্যাপারে আলোচনার জন্য সভা ডাকা হয়েছে। শিক্ষার মধ্যে ক্লাস পাঠদান ও পরীক্ষা সবই আসবে। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্র হতো, তখন স্যাম্পল নাম্বারিং ব্যবস্থা ছিল। স্যাম্পল নাম্বারিং হচ্ছে, কোন প্রশ্নের উত্তর কেমন লিখলে শিক্ষার্থী কত নম্বর হবে তা নিরূপণ করা। প্রশ্নফাঁস রোধে কয়েকবছর আগে বোর্ডভিত্তিক প্রশ্ন তৈরি করা হয়। এরপর এই স্যাম্পল প্রশ্ন কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি বন্ধ হয়েছে। তবে ঢাকা বোর্ড এবং বরিশাল বোর্ড এই কাজ আবার শুরু করেছে। তিনি বলেন, উত্তরপত্র সংগ্রহ করে তার ওপর আমরা গবেষণা করছি।