আবারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পরিকল্পনায় সরকার

সাত বছর বন্ধ থাকার পর নতুন করে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির পরিকল্পনা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে এমপিওভুক্তির যৌক্তিকতা ও শর্তাবলি পরীক্ষা করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।গত ১১ মে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান কমিটির কর্মপরিধি ঠিক করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি দেন। এরপর গত ১৮ মে অর্থমন্ত্রী কর্মপরিধির ব্যাপারে আরো কিছু দিকনির্দেশনা দেন।

তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। এর পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তিন মাস মেয়াদি এ কমিটির প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছার আগ পর্যন্ত নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি প্রদান বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নন-এমপিও শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। এমপিওর দাবিতে রাজধানীতে একাধিক কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে শিক্ষকদের। স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও নতুন করে স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। জাতীয় সংসদেও এমপিওভুক্তির ব্যাপারে বারবার বক্তব্য দিয়েছেন এমপিরা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এত দিন এমপিওভুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব নেননি। সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনেও রয়েছেন সরকারদলীয় নেতারা। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে এমপিওভুক্তির বিষয়টি আমলে নিচ্ছে সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি সময়েরও দাবি। তবে আমাদের তো আর্থিক ক্ষমতা নেই। একবার প্রতিষ্ঠান এমপিও হলে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হবে। সারা জীবন তাঁদের বেতন দিতে হবে। কিন্তু আমরা এত টাকা পাব কোথায়? যদি বাজেটে এই অর্থ পাস করা যায় তাহলে সমস্যা থাকবে না। তাই আমরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছি। তাঁদের বলেছি তাঁরা যেন একটি কমিটি করে একটা নিয়ম-নীতি করে দেন। তাহলে আমরা নতুন এমপিও দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারব। এ ছাড়া যদি কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়ে থাকে তাহলেও আমাদের শিক্ষা আইন পাস হওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারব। ’

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৬ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে এমপিও পদ্ধতির সমতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সবার সম্মতিতে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটিতে অর্থ বিভাগের একজন প্রতিনিধি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।

সূত্র জানায়, কমিটি মূলত তিনটি বিষয়ে কাজ করবে। প্রথমত তারা দেশের জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার যৌক্তিকতা পরীক্ষা করবে। দ্বিতীয়ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদানের অনুমতি প্রদান, একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান ও এমপিওভুক্তির শর্তাবলি পরীক্ষা করে কোনো সংশোধন, পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে সুপারিশ করবে।

তৃতীয়ত আর্থিক দিক ও অন্যান্য বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর আওতায় আনার ও এমপিও পদ্ধতি যৌক্তিক করার বিষয়ে সুপারিশ করবে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি অথবা অন্য ধরনের সহায়তা, কোনটি কার্যকর হবে সে ব্যাপারেও সুপারিশ করবে এ কমিটি।

২০১০ সালের পর আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেনি সরকার। তবে ইতিমধ্যে দেশের কোনো কোনো এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় স্কুল-কলেজের স্বল্পতা রয়েছে। কিছু এলাকায় প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন। অথচ কিছু এলাকায় প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে না। এসব বিষয় কিভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে কমিটি।

দেশে এখন এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। তবে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে একরকম বিনা বেতনে চাকরি করছেন এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিতভাবে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন।

বাংলাদেশে কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘এমপিও না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। যদিও তাঁরা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটাননি। পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিবছর ভালো ফল করছে এসব প্রতিষ্ঠান। এরপরও তারা এমপিও পাচ্ছে না। অবিলম্বে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হোক। ’ সূত্র : দৈনিক শিক্ষা ডটকম