আউটসোর্সিংয়ে সর্বনিম্ন বেতন ১৫,৫৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার

সারা দেশে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাস্টার রোল ও অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত (আউটসোর্সিং) কর্মচারীদের জন্য প্রথমবারের মতো সর্বনিম্ন মাসিক সাকল্য বেতন নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে ২০ নম্বর গ্রেডে থাকা কর্মচারীর সর্বনিম্ন মাসিক বেতন দাঁড়াবে ১৫,৫০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ ১৬ নম্বর গ্রেডের কর্মচারীর বেতন হবে ১৭,০৪৫ টাকা। নতুন এই কাঠামো আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও পহেলা বৈশাখে নববর্ষ প্রণোদনা দেওয়া হবে তাদের। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন কাঠামোতে মূল বেতন নির্ধারণ না করায় তাদের উৎসব ভাতা ও বৈশাখী প্রণোদনা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

নতুন কাঠামোয় বেতন পাওয়ার আগে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভিন্ন একটি কাঠামো প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তাতে সর্বনিম্ন ২০ নম্বর গ্রেডের কর্মচারী ১১,৯০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৬ নম্বর গ্রেডে ১৩,২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের মাসিক বেতনকে ‘সেবামূল্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবাগ্রহণ নীতিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় জাতীয় বেতন স্কেলের ১৬তম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মচারী পদে স্থায়ী নিয়োগের বদলে আউটসোর্সিং করার কথা বলা হয়েছে। সে অনুুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান জনবল নিয়োগ করছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এ ধরনের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। তাদের জন্য নির্ধারিত কোনো বেতন বা মজুরি কাঠামো ছিল না। শ্রম আইন সংশোধনের সময় বেসরকারি খাতে আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মজুরি ৭,০০০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এবার সরকারি খাতে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতনও নির্ধারণ করা হলো।

অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসরণে ১৬ থেকে ২০তম গ্রেডে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবাগ্রহণ নীতিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে মাসিক ন্যূনতম সেবামূল্য (বেতন) নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পাঁচটি গ্রেডে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরা নির্ধারিত হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও সরকারি চাকরিজীবীদের মতো নববর্ষের প্রণোদনা পাবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা মহানগরের মধ্যে কর্মরত ১৬তম গ্রেডের আউটসোর্সিং কর্মচারীর বেতন হবে ১৭,০৪৫ টাকা। ঢাকা মহানগরীতে ১৭তম গ্রেডের বেতন ১৬,৫৫০ টাকা, ১৮তম গ্রেডে ১৬,২২০ টাকা, ১৯তম গ্রেডে ১৫,৮০০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডে ১৫,৫৫০ টাকা হবে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা ও সাভার পৌর এলাকায় ১৬তম গ্রেডের বেতন হবে ১৬,১১৫ টাকা, ১৭তম গ্রেডের ১৫,৭০০ টাকা, ১৮তম গ্রেডের ১৫,৫০০ টাকা, ১৯তম গ্রেডের ১৫,২০০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডের বেতন হবে ১৪,৯৫০ টাকা। এসব এলাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে আউটসোর্সিংয়ে ১৬তম গ্রেডে কর্মরতদের বেতন হবে ১৫,৬৫০ টাকা, ১৭তম গ্রেডে ১৫,২০০ টাকা, ১৮তম গ্রেডে ১৫,০০০ টাকা, ১৯তম গ্রেডে ১৪,৭০০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডে ১৪,৪৫০ টাকা।

এর আগে গত বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের মধ্যে কর্মরত ১৬তম গ্রেডের আউটসোর্সিং কর্মচারীর বেতন হবে ১৩,২০৫ টাকা। ঢাকা মহানগরীতে ১৭তম গ্রেডের বেতন ১২,৭৭৫ টাকা, ১৮তম গ্রেডে ১২,৫১০ টাকা, ১৯তম গ্রেডে ১২,১৫০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডে ১১,৯০০ টাকা হবে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা ও সাভার পৌর এলাকায় ১৬তম গ্রেডের বেতন হবে ১২,৭৩৫ টাকা, ১৭তম গ্রেডের ১২,৩৫০ টাকা, ১৮তম গ্রেডের ১২,১৫০ টাকা, ১৯তম গ্রেডের ১১,৮৫০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডের বেতন ১১,৬০০ টাকা। এসব এলাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে আউটসোর্সিংয়ে ১৬তম গ্রেডে কর্মরতদের বেতন ১২,৫০০ টাকা, ১৭তম গ্রেডে ১২,১০০ টাকা, ১৮তম গ্রেডে ১১,৯০০ টাকা, ১৯তম গ্রেডে ১১,৬০০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডে ১১,৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসের বর্ধিত বেতন বকেয়া হিসেবে পরিশোধ করবে সরকার। তবে বকেয়া পরিশোধের সময় ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে প্রাপ্ত মহার্ঘভাতা সমন্বয় করা হবে।

বেতনের বাইরে বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও নববর্ষ ভাতা পাবেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। ১৬তম গ্রেডে ৯,৩০০ টাকা, ১৭তম গ্রেডে ৯,০০০ টাকা, ১৮তম গ্রেডে ৮,৮০০ টাকা, ১৯তম গ্রেডে ৮,৫০০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডে কর্মরতরা ৮,২৫০ টাকা হিসেবে বছরে দুটি করে উৎসব ভাতা পাবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

এ ছাড়া ১৬তম গ্রেডে থাকা কর্মচারীরা ১,৮৬০ টাকা, ১৭তম গ্রেডে ১,৮০০ টাকা, ১৮তম গ্রেডে ১,৭৬০ টাকা, ১৯তম গ্রেডে ১,৭০০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডে থাকা কর্মচারীরা ১,৬৫০ টাকা হিসেবে বছরে একটি করে নববর্ষ প্রণোদনা পাবেন, যা আগামী নববর্ষ থেকেই কার্যকর হবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ