নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী পাঁচ বছর চাকরি করলেই পেনশন পাবেন সরকারি চাকুরেরা। এছাড়া অর্জিত ছুটি দিয়ে পিআরএলের সময়ও ছয় মাস বাড়াতে পারবেন তারা।
সপ্তম বেতন কাঠামোতে পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ১০ থেকে ২৫ বছর নির্ধারিত ছিল। অর্থাৎ চাকরিকাল কমপক্ষে ১০ বছর না হলে কেউ পেনশন পেতেন না।
নতুন অষ্টম বেতন কাঠামোতে পেনশনযোগ্য চাকরিকালের সীমা পাঁচ বছর কমিয়ে পাঁচ থেকে ২৫ বছর পুনঃনির্ধারণ করে আদেশ জারি করেছে অর্থ বিভাগ।
গত ১৫ ডিসেম্বর অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর পেনশন সংক্রান্ত এই আদেশ হয়।
নতুন বেতন কাঠামোতে সরকারি চাকুরেদের পেনশনের হার ৮০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে; যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে। পিআরএল ভোগরত কর্মচারীরাও পুনঃনির্ধারিত এই সুবিধা পাবেন।
আদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে পাঁচ বছর চাকরির পর মূল বেতনের ২১ শতাংশ, ছয় বছর পর ২৪ শতাংশ, সাত বছর শেষে ২৭ শতাংশ, আট বছর শেষে ৩০ শতাংশ এবং চাকরির নয় বছর শেষে মূল বেতনের ৩৩ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন সরকারি কর্মচারীরা।
১০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত চাকরি শেষে পেনশনে যাওয়া সব স্তরেই পেনশনের পরিমাণ বেড়েছে।
নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, চাকরির ১০ বছর শেষে মূল বেতনের ৩৬ শতাংশ পেনশন পাবেন সরকারি কর্মচারীরা, আগে এই হার ছিল ৩২ শতাংশ।
চাকরির ১১ বছর শেষে ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৯ শতাংশ, ১২ বছরে ৩৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩ শতাংশ, ১৩ বছর শেষে ৪২ শতাংশ থেকে ৪৭ শতাংশ, ১৪ বছরে ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫১ শতাংশ, ১৫ বছরে ৪৮ শতাংশ থেকে ৫৪ শতাংশ, ১৬ বছরে ৫১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৭ শতাংশ পেনশন পাবেন সরকারি চাকুরেরা।
আর চাকরির বয়স ১৭ বছর পার হলে পেনশনের পরিমাণ মূল বেতনের ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৩ শতাংশ, ১৮ বছর হলে ৫৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ শতাংশ, ১৯ বছরে ৬১ থেকে ৬৯ শতাংশ, ২০ বছরে ৬৪ শতাংশ থেকে ৭২ শতাংশ, ২১ বছরে ৬৭ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ, ২২ বছরে ৭০ শতাংশ থেকে ৭৯ শতাংশ, ২৩ বছরে ৭৪ শতাংশ থেকে ৮৩ শতাংশ, ২৪ বছরে ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৭ শতাংশ পেনশন পাবেন।
এখন থেকে ২৫ বছর ও তার বেশি চাকরি করলে মূল বেতনের ৯০ শতাংশ হারে পেনশন পাওয়া যাবে, আগে এই হার ছিল ৮০ শতাংশ।
চাকরিতে যোগ দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো কর্মচারী মারা গেলে বা সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড স্থায়ীভাবে শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম ঘোষণা করলে তিনি পেনশন পাবেন।
এছাড়া চাকরি পাওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় স্থায়ী পদ বিলুপ্তির কারণে কেউ চাকরি থেকে ছাঁটাই হলেও পেনশন পাবেন।
১০ থেকে ২০ বছর বা তার বেশি চাকরিকালে পেনশনারদের আনুতোষিকের হার আগের মতোই এক টাকার বিপরীতে ২৩০ টাকা রাখা হয়েছে।
পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ১০ থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর নির্ধারণ করায় পূর্ণ পেনশনের ক্ষেত্রে আনুতোষিকের হার বাধ্যতামূলক সমর্পিত প্রতি এক টাকার বিপরীতে ২৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
আর চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়ার আগেই কোনো কর্মচারী মারা গেলে বা স্বাস্থ্যগত কারণে অক্ষম হলে ওই কর্মচারী যত বছর চাকরি করেছেন প্রত্যেক বছরের জন্য সবশেষ মূল বেতনের তিনগুণ অর্থ সহায়তা পাবেন।
আগে কোনো কর্মচারী পেনশনযোগ্য চাকরির মেয়াদপূর্তির আগে (১০ বছর) মারা গেলে এককালীন ১৫ হাজার টাকা পেতেন।
সপ্তম বেতন কাঠামো অনুযায়ী কর্মচারীর বিধবা স্ত্রী আবার বিয়ে না করার অঙ্গীকারনামা দিয়ে আজীবন পেনশন পেতেন। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী ৫০ বছরের বেশি বয়সী বিধবাদের সেই অঙ্গীকারনামা দিতে হবে না।
মারা যাওয়া কোনো কর্মচারীর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে না করলে সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত পারিবারিক পেনশন পাবেন।
এখন থেকে কোনো কর্মচারী চাইলে এক বছরের পরিবর্তে অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) দেড় বছর নিতে পারবেন।
সরকারি কর্মচারীরা এক বছরের পিআরএল পান।
পিআরএলের সময় ছয় মাস বাড়াতে হলে এক বছরের অর্জিত ছুটিকে ছয় মাসের পিআরএলে রূপান্তর করা যাবে। অর্জিত ছুটিকে পিআরএলে নগদায়নের ক্ষেত্রে দুই দিনে অর্ধগড় বেতনের ছুটিকে এক দিনের গড় বেতেন ছুটিতে রূপান্তর করা হবে।
তবে অর্জিত ছুটি দিয়ে কেউ পিআরএলের সময় না বাড়ালে তিনি ওই অর্জিত ছুটির আর্থিক সুবিধা পাবেন বলেও আদেশে উল্লেখ রয়েছে।
সূত্র: বিডিনিউজ২৪ ডট কম