“হাইকোর্টের রায়ের আলোকে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যানেলভুক্ত শিক্ষকরা রমজানের আগেই নিয়োগ পেতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে বহু প্রতিক্ষিত হাইকোর্টের রায়প্রাপ্ত প্রায় ১৬ হাজারের অধিক প্যানেলভুক্ত শিক্ষক নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। রমজানের আগেই এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দেশে প্রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩০ হাজারেরও বেশি শূন্য পদ আছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্যানেলভুক্ত শিক্ষদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। রায় অনুসারে সকল শিক্ষক নিয়োগ পাবেন। তবে রিট করেননি এমন শিক্ষকদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চাইলে নিয়োগ দিতে পারে।
জানা যায়, বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (বর্তমানে সরকারি) প্যানেলভুক্ত সহকারী শিক্ষক ২৮ হাজার। রিট করেছেন ১৬ হাজারের অধিক। তাদের মধ্যে দীর্ঘ অপেক্ষার পর আপিল বিভাগের রায়ে ১০ জন নিয়োগ পেলেও বাকিরা চাতক পাখির মতো চেয়ে আছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে। তাদের একটাই আশা খুব দ্রুতই নিয়োগের চিঠি পেয়ে যাবেন হাতে।
সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েও নিয়োগ না পাওয়া প্যানেলভুক্ত প্রার্থীরা প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে আন্দোলন ও আইনি লড়াই করছেন। গত ২০১৪ সালের ১৮ জুন নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ জন শিক্ষক হাইকোর্ট থেকে নিয়োগের বিষয়ে আদেশ পান। পরবর্তীতে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ এপ্রিলে এসে নিয়োগের চূড়ান্ত চিঠি পান। এছাড়াও ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ২৬৮, ২০১৫ সালের ৭ মে ২৩১, ১৭ সেপ্টেম্বর ১০ হাজার ৫০০, ৯ ডিসেম্বর ৪০০০ এবং ১০ ডিসেম্বর এক হাজার শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব নিয়োগের আদেশ পাওয়া শিক্ষকদের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ডিসি, জেলা শিক্ষা অফিসার, থানা শিক্ষা অফিসারগণের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের আইনজীবী ছিদ্দিক উল্লাহ্ মিয়া। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ২৬৮, ২৩১ ও ১০ হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে আপিল করেন। বর্তমানে মামলাটি ঝুলে আছে।
এদিকে গত রোববার সন্ধ্যায় প্যানেলভুক্ত শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে তার বাসভবনে দেখা করতে যান। এসময় মন্ত্রী রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিষয়ে দুশ্চিন্তা না করার আশ্বাস দেন। এবং রায়ের আলোকে নিয়োগেরও বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। এমনটাই জানান প্যানেলভুক্ত বাগেরহাট শিক্ষক প্রতিনিধি মল্লিক আব্দুর রাজ্জাক।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য ২০১০ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। ৪২ হাজার ৬১১ জনের প্যানেল তৈরি করে সরকার উত্তীর্ণদের পাঁচ বছরের মধ্যে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে। প্রথম ধাপে ১৪ হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১২ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়, উপজেলাভিত্তিক নয়, ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োগ হবে। ২০১৩ সালে সরকার দেশের সব রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়।
ফলে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ লাভ থেকে বঞ্চিত হন। এরপর সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য নতুন করে নিয়োগ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর প্যানেলভুক্ত শিক্ষকরা আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে তা বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে প্যানেলভুক্তদের মধ্য থেকে নওগাঁ জেলার ১০ জন নিয়োগপ্রত্যাশী ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং তাদের নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে রিট আবেদনকারী ১০ জনকে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন এবং ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে হেরে যাওয়ার পর রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রিভিউ আবেদনেও হেরে যাওয়ার পর গত ২৪ মার্চ ওই ১০ জনকে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। পরে আরো প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষককে নিয়োগের আদেশ দেন হাইকোর্ট।”
এ রকম একটি সংবাদ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কোন ওয়েবসাইটে এমন কোন সংবাদ অামরা এখনো পাইনি।