দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অভিন্ন নিয়োগ ও পদোন্নতির বিধিমালা প্রণয়ন করছে সরকার। ইতিমধ্যে বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এটি গত সপ্তাহে প্রশাসনিক উন্নয়ন সচিব কমিটির বৈঠকে পাঠানো হলে তা আরও পর্যালোচনার জন্য ফেরত পাঠানো হয়। শিগগিরই বিধিমালাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সচিব কমিটিতে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অষ্টম বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল দেওয়ার বিধান বিলুপ্ত করায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ নেই বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি লিখিত আকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পক্ষে কয়েকজন অষ্টম পে-স্কেলে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, অভিন্ন নিয়োগ ও পদোন্নতির বিধিমালা প্রণয়ন করা হলে কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হবে। একই নিয়মে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগ হবে। পদোন্নতিও হবে সমানভাবে। এ ছাড়া পদোন্নতির সুযোগ তৈরির জন্য সংশিল্গষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি চাকরিতে একই ধরনের পদের নিয়োগের যোগ্যতা অভিন্ন করা হচ্ছে। বর্তমানে একই পদের নিয়োগে আলাদা বিধিমালা থাকায় নানা জটিলতা হচ্ছে। এ ছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেসব জটিলতার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোও পর্যালোচনা করে সমাধান করা হবে।
অষ্টম জাতীয় বেতনক্রমে দেশের ১০ লাখেরও বেশি দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ভবিষ্যৎ পদমর্যাদা নিয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এসব পদের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ নেই বললেই চলে। তবে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত হয়ে অবসরকালে তারা যে বেতন-ভাতা পান, তা ক্ষেত্র বিশেষে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণীর পদে যারা নিয়োজিত থাকেন, প্রায় তাদের সমান হয়। এটিকেই তারা মর্যাদা বলে বিবেচনা করেন।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর পদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়োগবিধি রয়েছে। এতে বিভিন্ন সংস্থায় একই সময়ে একই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়মিতকরণ এবং পদোন্নতিতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এই জটিলতা দূর করতে ‘মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর সংযুক্ত অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও করপোরেশনের কমন পদের নিয়োগ বিধিমালা-২০১৬’ চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও সংযুক্ত অধিদপ্তরের একই ধরনের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫টি বিধিমালা ছাড়াও সংশিল্গষ্ট মন্ত্রণালয়ের অফিস স্মারক/পরিপত্রও রয়েছে। এসব পদের নাম ও বেতন স্কেল একই হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিন্নতা রয়েছে।
রাজউকে ইউডি পদে ৮ বছর চাকরি করলে অফিস সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া যায়। একই পদে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ১২ বছর চাকরি করার পর পদোন্নতি পাওয়া যায়। এ ধরনের নজির রয়েছে বহু সরকারি দপ্তরে। আর এসব নিয়ে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে।
অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালার প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে একই ধরনের পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী, প্লেইন পেপার কপিয়ার, ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর, সাঁটলিপিকার, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী, ডেসপাস রাইডার, দপ্তরি ও এমএলএসএস। সচিবালয়ে উলি্লখিত পদের জন্য বিশেষ নিয়োগ বিধিমালা ২০১০ অনুসরণ করা হয়। এ ছাড়া সচিবালয়ের ভেতরের ক্যাডার-বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১৪ অনুসরণ করা হয়। এক সংস্থার নিয়োগবিধির সঙ্গে অন্য সংস্থার নিয়োগবিধির কোনো মিল না থাকায় বিভিন্ন সংস্থায় একই সময়ে একই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়মিতকরণ এবং পদোন্নতিতে কেউ এগিয়ে কেউবা পিছিয়ে পড়ছেন। ব্রিটিশ আমলের বেশকিছু পদের নাম ও পদবি পরিবর্তন হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রস্তাবে উলেল্গখ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্রে এমএলএসএস এবং দপ্তরি উভয় পদকে ‘অফিস সহায়ক’ পদে পরিবর্তন করা হয়। তবে দপ্তরি পদের বেতন স্কেল উচ্চতর হওয়ায় প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালায় পদটিকে ‘অফিস সহায়ক (উচ্চ স্কেল)’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন যেসব দপ্তর-অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে অধস্তন পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদোন্নতির সুযোগ কম। কারণ বেশিরভাগ পদে প্রশাসন ক্যাডার, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ করে রাখা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিক্ষা অধিদপ্তরে উপপরিচালক, পরিচালক এবং সর্বোচ্চ মহাপরিচালকের পদে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক থেকে শুরু করে মহাপরিচালক পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের বা শিক্ষা ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত।
সূত্র : দৈনিক সমকাল।