অবশেষে সরকারি কলেজগুলোকে যেতেই হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
দুই বছর আটকে থাকার পর হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ২৮১টি সরকারি কলেজ ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত ৩০ কোটি টাকা চেয়েছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’ (ইউজিসি)।
এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন। সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গেলে কলেজের শিক্ষার মান বাড়বে, সেশন জট কমবে। এ জন্য সব কার্যক্রম শেষ করা হচ্ছে। যদিও সরকারি কলেজগুলো অধিভুক্তির বিরোধিতা করে আসছে।
৭ সেপ্টেম্বর ইউজিসি থেকে শিক্ষা সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সরকারি কলেজগুলোর অধীনে নিতে এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে কলেজ পরিদর্শকের কার্যালয় খুলতে হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে অন্তত ৮৩০ জন জনবল নিয়োগ দিতে হবে। এতে বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি বছর আরও ৩০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি কলেজগুলোকে অধীভুক্ত করা হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে_ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোন কোন কলেজ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও জয়পুরহাট জেলার সরকারি কলেজগুলোকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হচ্ছে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সরকারি কলেজগুলো যাচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
আর যশোর, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কলেজগুলো যাচ্ছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের কলেজগুলো যাচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায়। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরের কলেজগুলো যাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সরকারি কলেজগুলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া জেলার কলেজ যাবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলার কলেজগুলো যাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায়। আর পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার সরকারি কলেজগুলোর অধিভুক্ত হবে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী জেলার সব সরকারি কলেজের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধিভুক্ত কলেজগুলো শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম, অধিভুক্তি নবায়ন, সিলেবাস নির্ধারণ, কোর্স-কারিকুলাম তৈরি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ করবে।
ইউজিসিকে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, কলেজ পরিদর্শন দফতরে কেবল জনবল নিয়োগ দিলেই চলবে না। সেখানে ভৌত অবকাঠামো আবশ্যক। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে চাহিদাপত্র চাওয়া হয়েছে। এতে আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। এতে বলা হয়, ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীর নগর, চট্টগ্রাম এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলোর অধিভুক্ত কলেজগুলো পরিচালনা করার মতো অভিজ্ঞ জনবল নেই। তাই ৮৩০ জন জনবল নিয়োগের পর তাদের জরুরিভিত্তিতে ঢাকায় এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে সরকারের এই উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে।
চিঠিতে ইউজিসি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আরও জানিয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পুরনো ২-৩টি ছাড়া বাকিগুলোর আইনে কলেজ অধিভুক্ত করার বিধান নেই। এ কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ লাখ চলে যাবে। এতে বাকি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা আদায় হবে তা দিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ভেতন-ভাতা দেওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব হবে না। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের কাছ থেকে মঞ্জুরি হিসেবে কোনো অর্থ সহায়তা নিচ্ছে না। কিন্তু অধিভুক্ত করা হলে তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেই। কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে নিবন্ধন করতে হবে এবং লোকবল লাগবে। এ ছাড়া পরীক্ষা নিতে অবকাঠামোর প্রয়োজন পড়বে। পর্যায়ক্রমে এখন এসবের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৮১টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ে পুরনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেন। এরপর এ বিষয়ে সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। ইউজিসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক মো. মোহাব্বত খানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি বিষয়টি চূড়ান্ত করে।
উল্লেখ্য, ইউজিসির চিঠিতে ২৮১টি সরকারি কলেজের কথা বলা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে ৩০৩টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে কলেজ জাতীয়করণের কাজ চলছে। তাই সরকারি কলেজের সংখ্যা আরও বাড়বে।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা