দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মানসম্মত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ স্কুলগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথমে ঢাকা মহানগরের ৩৪২টি সরকারি বিদ্যালয়কে নতুনভাবে সাজানো হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় ৬৪ হাজার বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানো হবে।
সম্প্রতি সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সন্তান ভর্তি করতে আগ্রহ নেই অধিকাংশ অভিভাবকের। সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিভিন্ন কেজি স্কুল এবং নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে চান তারা। এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান খারাপ হওয়ায় তাদের আগ্রহ কম। কেবল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রাহী হচ্ছে না।
সব স্তরের শিক্ষার্থী টানতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ, ভবন সংস্কার, প্রাচীর তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যালয়ের ভেতর-বাহিরে চাকচিক্য করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ঢেলে সাজাতে সম্প্রতি একটি জরিপ করা হয়েছে। সেখানে ৩৭ শতাংশের বেশি স্কুলের ভবন ব্যবহারের অনুপযুক্ত বলে এ জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জরিপে দেখা গেছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৬৪ হাজার ১১২টি। ২০১৩ সালে নতুন জাতীয়করণ করা স্কুল রয়েছে ২৬ হাজার ১৯৩টি। ঢাকা মহানগর জুড়ে রয়েছে ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারাদেশে মোট প্রাথমিক সরকারি স্কুলগুলোর ৩৭ শতাংশের বেশি স্কুলের ভবন ব্যবহারের অনুপযুক্ত। এসব স্কুলগুলো পাকা ও সেমি পাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন দেখা গেছে, ২০১৩ সালের পূর্বের সরকারি প্রাথমিকের পাকা স্কুলগুলোর অবকাঠামো মাত্র ৪৭ শতাংশ ভালো পর্যায়ে রয়েছে। মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে ২৩ শতাংশ স্কুল। আর খারাপ পর্যায় রয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। তবে ২৩ শতাংশ স্কুলের অবস্থা একেবারেই নাজুক, ব্যবহার অযোগ্য। সেমিপাকা স্কুলগুলোর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ ভবন ভালো মানের রয়েছে। প্রায় ১৮ শতাংশ স্কুলের অবকাঠামো মাঝামাঝি। খারাপ পর্যায়ে রয়েছে ২১ শতাংশ স্কুলের ভবনগুলোর অবস্থা। আর সেমিপাকা ৫৪ শতাংশ স্কুল একেবারেই অব্যবহারযোগ্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন জাতীয়করণ করা প্রাথমিক পাকা করা স্কুলগুলোর মধ্যে ৩২ শতাংশ স্কুলের ভবনগুলো ভালো পর্যায়ে রয়েছে। ২৫ শতাংশ স্কুল মোটামুটি ভালো পর্যায়ে রয়েছে। নতুন জাতীয়করণ করা পাকা স্কুলগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ একেবারেই ব্যবহারের অনুপযুক্ত।
এ পর্যায়ের সরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে আধাপাকা স্কুলের ২১ শতাংশ রুমগুলো খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। ৪২ শতাংশ স্কুল একেবারেই ব্যবহারের অনুপযুক্ত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সময় স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠদানও বন্ধ থাকে।
রাজধানী ঢাকার ৩৪২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়াও পুরান ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১২টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৩০ জন করে। একটি রুমের মধ্যে চলছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। অথচ সেসব বিদ্যালয়ে পাঁচজন করে শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে রাজধানী ঢাকার ৩৪২টি বিদ্যালয়কে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার সব বিদ্যালয় সংস্কার করা হবে।
পাশাপাশি ঢাকার এক রুমের মধ্যে পরিচালিত হওয়া ১২টি সরকারি বিদ্যালয়কে একটি বা দুটি স্থানে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে খেলার মাঠ, মানসম্মত ভবন তৈরি করে এসব বিদ্যালয়কে একত্রিত করার মধ্যে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপ দেয়া হবে। খালি স্থানে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তৈরি করা হবে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সব স্তরের মানুষের পড়ালেখার উপযোগী করে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে নতুনভাবে ভবন নির্মাণ, সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন করতে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে পাইলটিং হিসেবে রাজধানী ঢাকার ৩৪২টি স্কুলে নতুনভাবে সংস্কার কাজ করা হবে। এ লক্ষ্যে ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চলতি মাসে এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে এ প্রকল্পের কার্যক্রম। এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে। ঢাকার কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে জেলা পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।