এক: লিখিত পরীক্ষা যা দিয়েছেন, দিয়েছেন। এটা নিয়ে সব ভাবাভাবি বাদ। ভালো পরীক্ষা দিলেই যেমন ভালো মার্কস পাওয়া যায় না, তেমনি খারাপ পরীক্ষা দিলেই খারাপ মার্কস পাওয়া যায় না। পরীক্ষা ভালো দিলেই ক্যাডার হওয়া যায় না। পরীক্ষা খারাপ দিলেই ফেল করা যায় না। সিনেমার কাহিনী এখনো বাকি! বিনয়ের সাথে শেষ হাসিটা হাসার জন্য ওয়েট করুন।
দুই: ভাইভার প্রিপারেশন যা-ই নিন না কেন, এটা মাথায় রেখে পরীক্ষা দিতে যাবেন, ভাইভাতে কিছুই কমন আসবে না। আমি যা যা পড়েছিলাম, তার ২০%ও আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। ভাইভাতে ভালো করার অন্তত ১০০টা উপায় আছে। দুঃখের বিষয়, এগুলোর একটাও কাজ করে না।
তিন: ভাইভাতে ‘জিজ্ঞেস করা উচিত’ বলে কিছু নেই। আমার আগের ১০ জনকেই মুক্তিযুদ্ধ/ বঙ্গবন্ধু নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আমাকে ওখান থেকে কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়নি। ভাইভার আগে কতো কতো ক্যান্ডিডেটের সাথে কথা বলেছি, কাকে কী জিজ্ঞেস করল জানার জন্য। পরে দেখলাম, এতে আজাইরা ভয় বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো লাভই হয়নি। আমার ভাইভায় কী কী প্রশ্ন যে হয়েছিল! আমি তো বোর্ডে বসে বসে শুধু ভাবছিলাম, হায়! আমাকে অমুক অমুক জিনিস জিজ্ঞেস করে না কেন করে না কেন? এতো কষ্ট করে পড়লাম! মনে হচ্ছিল, স্যারদেরকে বলি, “স্যার, আমি ওইটা ওইটা পারি তো! আমাকে ওগুলো জিজ্ঞেস করবেন না?” আপনি যা ইচ্ছা পড়তে পারেন, কিন্তু সমস্যা হল, জিজ্ঞেস না করলে তো আর নিজ থেকে উত্তর দেয়া যায় না। আপনার প্রশ্ন কেমন হবে, সেটা নির্ভর করবে ওইসময়ে স্যার যে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে প্রশ্ন ধরবেন, সে চায়ে দুধচিনি ঠিকমতো হয়েছে কিনা, তার উপর। (একটু ঘুরিয়ে বললাম। বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।)
চার: ৩৪তম বিসিএস ভাইভা ৩৫তম বিসিএস প্রিলির আগে হওয়ার কথা নয়। তার মানে, আপনাদের হাতে আরো অন্তত দেড় মাস সময় আছে। এইসময়ে শুধু প্রিলির জন্য পড়াশোনা করুন। যাদের প্রিলির পড়া নেই, ওরা ভালমানের কম্বল কিনে শীতঘুম ঘুমান। চাকরিতে একবার ঢুকে গেলে, জ্যাবন ত্যানা ত্যানা হয়া যাবে। তাই এইসময়ে ভাইভা স্প্রাইট দিয়ে ভিজিয়ে মুড়ি খাক।
পাঁচ: ভাইভার গাইডটাইড এখন পড়ার দরকার নেই। ওসব পড়বেন প্রিলির পর। খুব ইচ্ছে হলে এইসময়ে সাবটাইটেল অন করে (আমেরিকান অ্যাক্সেন্টের) ইংরেজি মুভিটুভি দেখতে পারেন, বিটিভির রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদ, সিএনএন আর আল-জাজিরার নিউজ শুনতে পারেন। ওদের বলার স্টাইলটা ফলো করুন। যতদূর সম্ভব আঞ্চলিকতা পরিহার করার চেষ্টা করুন। ভাইভা বোর্ডে গিয়ে ‘আঞ্চলিক ইংলিশ’ বলতে শুরু করলে তো সমস্যা! মাঝে মাঝে কোনো ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে দুচার মিনিট ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। তবে এমন কোনো মহাপণ্ডিতের সাথে নয়, যে শুধু ভুলই ধরিয়ে দেয়। ও অনেক পারে, আপনি কিছুই পারেন না, এটা ওর কাছ থেকে ফোনের বিল খরচ করে বুঝে আপনার কী লাভ? স্পোকেন কোর্সটোর্স করার দরকার নেই। এইসময়ে নিজেকে বদলাতে চেষ্টাটেস্টা করবেন না; পারবেনও না, মাঝখান থেকে শুধুশুধু নার্ভাসনেসই বাড়বে। আপনি যেরকম, সেটাকেই সুন্দরভাবে তুলে ধরতে জানাটাই
ছয়: এবার পরীক্ষার্থীর অনুপাতে লিখিত পাস করেছে কম, তাই আপনি নিঃসন্দেহে ‘সৌভাগ্যবান’। (আমি এইক্ষেত্রে ‘যোগ্য’ শব্দটার চাইতে ‘সৌভাগ্যবান’ শব্দটা ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করি।) লিখিত পাস করাটা একটা বিরাট ব্যাপার, তবে অতোটা বিরাট না যে ২৪৪১১৩৯-এ ফোনটোন করা শুরু করে দিতে হবে। বেলা বোস আরো কিছুদিন অপেক্ষায় থাকুক। (থাকে না রে ভাই, জানি। তবুও……..পারলে বেলা বোসের বাপকে ম্যানেজ করুন।) অপেক্ষা করুন। The game is not over yet.
সাত: তাহলে ভাইভার প্রিপারেশন নেয়া শুরু হবে সামনের প্রিলির পর থেকে। আপনার ভাইভার ডেট দেয়ার পর আপনি হাতে সময় পাবেন অন্তত ১০ দিন। সেইসময়ে সেইরকম পরিশ্রম করে একটা সেইরকম পড়া দিয়ে একটা সেইরকম প্রিপারেশন নিয়ে ফেলতে পারবেন ইনশাল্লাহ। এখন বিভিন্ন ননইনফরমেটিভ টপিক নিয়ে একটু পড়াশোনা করে রাখতে পারেন। এই যেমন, Tell us about yourself…… Why do you want to join civil service? এই জাতীয় কিছু প্রশ্ন। উত্তরটা যাতে হয় আপনার নিজস্ব, কোনো গাইডবুক লেখকের নয়।
আর্ট: অনেকে অনেক কথা বলবে। সেগুলো এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিন। পাবলিক কত কথা বলে রে! এই যেমন, ভাইভা বোর্ডে স্যারের সামনে নাকি একেবারে ৯০ ডিগ্রি কোণে বসতে হবে। আরে ভাই, আপনি ৮৮.৫ ডিগ্রি কোণে বসলে কেউ কি পেন্সিলকম্পাস আর চাঁদা দিয়ে মেপে আপনার মার্কস ১.৫ মাইনাস করে দেবে নাকি?
লেখাঃ সুশান্ত পাল, ৩০ তম বিসিএসে প্রথম স্থান অধিকারী