সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে ২০১২ সালের ১৫ মে। কিন্তু এই চার বছরেও নতুন নিয়োগ বিধি হয়নি। ফলে বন্ধ আছে শিক্ষক নিয়োগ। এরই মধ্যে সাড়ে ৩০০ বিদ্যালয়ে শূন্য হয়েছে এক হাজার ৭৪১ সহকারী শিক্ষকের পদ। এ অবস্থায় বিকল্প পথে কিভাবে নিয়োগ দেওয়া যায় তা নিয়ে আজ রবিবার সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) বৈঠক বসছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এবং শিক্ষা, অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. এলিয়াছ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাল (আজ) পিএসসিতে বৈঠক আছে। এতে শুধু শিক্ষাই নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। যেহেতু নিয়োগবিধি আমরা এখনো পাইনি, তাই বিকল্প পথে কিভাবে নিয়োগ দেওয়া যায় সেটা নিয়েই আলোচনা হবে। মূলত বিসিএসে উত্তীর্ণ যেসব প্রার্থী নিয়োগ পাননি অথচ অপেক্ষমাণ আছেন, তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির এই পদে নিয়োগ দেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হবে। পুরনো বিধিতেই এই নিয়োগ দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে কথা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এত দিন সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক পদটি তৃতীয় শ্রেণিতে ছিল। তখন নিয়োগ দিত মাউশি। কিন্তু ২০১২ সালে এই পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হলে নিয়োগের ক্ষমতা পিএসসির হাতে চলে যায়। কিন্তু চার বছরেও বিধি না হওয়ার নিয়োগ দিতে পারছে না পিএসসি। অবশ্য ২০১৩ সালে খসড়া নিয়োগবিধি প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় জনপ্রশাসনে। সেটা এখনো ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের শেষ দিকেও নিয়োগ বিধির দিকে নজর না দিয়ে অস্থায়ী (অ্যাডহক) নিয়োগের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল মাউশি অধিদপ্তর। তখন অনেকদূর কাজ এগোলেও শেষ পর্যন্ত তা আর কার্যকর করা যায়নি। এবারও একই পথে তারা।
নাম প্রকাশ না করে মাউশি অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিয়োগ বিধি এখন আছে জনপ্রশাসনে। তিন বছর ধরে এটি কী কারণে সেখানে পড়ে আছে তা বের করে ইচ্ছে করলেই তার সমাধান করা সম্ভব। জনপ্রশাসনের কাজ শেষ হলে সেটি যাওয়ার কথা অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপর তা সচিব কমিটিতে অনুমোদিত হতে হবে। কিন্তু এই নিয়োগ বিধি করার বিষয়ে কারোর তাগিদ নেই। সবাই ব্যস্ত অ্যাডহক নিয়োগ নিয়ে। কারণ একজন শিক্ষককে অ্যাডহক নিয়োগ দিলে অনায়াসেই ১০ লাখ টাকা করে পাওয়া যাবে। সেই হিসাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মোট পদের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ তিন হাজার ৮৮২টি পদ প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে সিনিয়র শিক্ষক পদবিতে উন্নীত করা হয়। ফলে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের চাহিদা এখন তুঙ্গে।
নিয়োগ বিধিমালা নিয়ে সর্বশেষ গত বছরের ১২ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৈঠক করে। সেখানে অন্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের অনেক পদ খালি রয়েছে। জানুয়ারি নাগাদ শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ৫০০ হবে। জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ না হলে সরকারি স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে নতুনভাবে নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন না করে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ১৯৯১’ এর তফসিলের ‘জেলা শিক্ষা অফিস ও সরকারি স্কুল’ অংশের ক্রমিক নম্বর ১ থেকে ৫ সংশোধন করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালা রহিত করে হালনাগাদ পূর্ণাঙ্গ বিধিমালা প্রণয়নের কার্যক্রমও গ্রহণ করা জরুরি।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাব সচিব কমিটিতে পাঠাতে নতুন করে বেশ কিছু কাগজপত্র চেয়ে পাঠায়। এর মধ্যে রয়েছে নিয়োগ বিধি পরীক্ষণসংক্রান্ত উপকমিটির সভার কার্যবিবরণী, তফসিলকৃত খসড়া প্রজ্ঞাপন, বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালার তফসিলের তুলনামূলক বিবরণী, পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল উন্নীতকরণে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির কপি, নিয়োগ যোগ্যতা নির্ধারণসংক্রান্ত পত্রের কপি, পদমর্যাদা উন্নীতকরণে সচিব কমিটির সুপারিশের কপি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনকৃত সারসংক্ষেপের কপি ইত্যাদি।
জানা যায়, গত ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী এই সারসংক্ষেপের অনুমোদন দেন। শিক্ষাসচিব বরাবর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সারসংক্ষেপ বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নির্দেশক্রমে ফেরত দেওয়া হলো।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইনছান আলী বলেন, ‘সরকারি স্কুলে শিক্ষক সংকট চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া ৪৫০টি পদে সহকারী প্রধান শিক্ষকও নেই। সহকারী শিক্ষকরা এসব পদে পদোন্নতি পেলে সংকট আরো বাড়বে। যেহেতু সহকারী শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির ও আট বছর পর তাঁরা প্রথম শেণিতে উন্নীত হবেন, তাই আমরা চাই যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক। বিকল্প কোনো উপায়ে নয়, দ্রুত নিয়োগ বিধি অনুমোদন করে পিএসসির মাধ্যমেই আমরা শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ