বাংলাদেশী ফ্রিলান্সারদের সুখবর দিতে পারে Paypal

দেশের ফ্রিল্যান্স্যারদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। ধরা দিতে যাচ্ছে এতোদিনের ‘অধরা’ পেপল। অনলাইন আউটসোর্সিং খাতের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন মার্চেন্ট (পেমেন্ট প্রসেসর) পেপল সুখবর দিতে পারে বাংলাদেশকে। আশা করা হচ্ছে, এবার হয়তো পেপল বলেই ফেলবে ‘আমরা বাংলাদেশে আসছি’। সোম ও মঙ্গলবার পেপলের সঙ্গে বৈঠকের পরই আসতে পারে এমন সুখবর।

paypal

পেপলের সঙ্গে দুটি বৈঠক করতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পেপলের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আগ্রহের কারণে বৈঠক দুটি বিশেষ মর্যাদা পেতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন পাওয়ার পরও পেপল জানিয়ে দিয়েছিল, তারা বাংলাদেশে আসছে না। যদিও বাংলাদেশ কখনও হাল ছাড়েনি।

পেপলের সম্ভাব্য ব্যবসায় হাবগুলোর (বিজনেস ডেস্টিনেশন) তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না। দেশে বর্তমানে অনলাইন মার্চেন্ট পায়োনিয়ার, অ্যালার্টপে ও মানিবুকারস তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অস্টিনে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় পেপলের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন জুনাইদ আহমেদ পলক। জানা গেছে, ওই বৈঠকেই মূলত চূড়ান্ত হয়ে যাবে পেপলের বাংলাদেশে আসা না আসা।

আগামীকাল  মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ায় পেপলের প্রধান কার্যালয়ে পেপল টিমের সঙ্গে বসবেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে পেপলের সঙ্গে বাংলাদেশের বিজনেস নীতিমালা, অবকাঠামোগত সুবিধা, ফ্রিল্যান্সারদের কাজকর্ম এবং সরকারি উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আইসিটি বিভাগের সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, পেপলের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেল, আইবিএম’র সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি। এরপর তিনি বিশেষ বৈঠক করবেন ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে। বাংলাদেশ শিগগিরই ক্ল‌‌‌াউডে যাবে। এই বিষয়ে তিনি ক্লাউড সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ওই আলোচনা পর্বে  ক্লাউড এবং বৃহৎ ডাটা সেন্টার বিশেষ প্রাধান্য পাবে।

পেপল বাংলাদেশে আসতে না চাইলেও দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে পেমেন্ট প্রসেসরটিকে দেশে আনার। বেসিস এবং বিসিএস কখনও এ বিষয়ে হাল ছেড়ে দেয়নি। ২০১৩ সালের এপ্রিলের শুরুতে সিলেটে ই-বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, আগামী দেড় মাসের মধ্যে দেশে চালু হবে ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজ পদ্ধতি পেপল।

প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় কিছুদিন আগে আইসিটি বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমরা পেপলকে আনার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ওরা আসতে চায় না। তবে আমরা থেমে থাকব না। আবার শুধু পেপলের দিকেই তাকিয়ে থাকব না। অন্যদের সঙ্গেও কাজ করব।’

আরেকটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘পেপল পেতে হলে যেসব যোগ্যতা লাগে তার সবই বাংলাদেশের রয়েছে।’

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী এবার পেপলের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই দেশ ছেড়েছেন। আর সংশ্লিষ্ট সূত্রও জানিয়েছে, পেপল থেকে এক ধরনের সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ।

পেপলের বাংলাদেশে আসা-না আসা নিয়ে বিতর্ক চলছে ২০১১ সাল থেকে। সেসময় অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) বলেছিল, পেপলের বাংলাদেশে আসতে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট গেটওয়ে বিষয়ে সার্কুলার জারি করলেই কেবল পেপল বাংলাদেশে আসবে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর’ নিয়ে সার্কুলার জারি করলে দেশে বৈধতা পায় পেপল। কিন্তু পরে পায়োনিয়ার, অ্যালার্টপে ও মানিবুকারস দেশে এলেও আসে না পেপল।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরও বলেছিল, পেপল আপাতত বাংলাদেশে আসছে না। তবে কোনও দুর্বলতার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষ আরও বলেন, ‘আমাদের সব নীতি তাদের মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আলাদা সফটওয়্যার তৈরি করে তারপর আমাদের দেশে আসবে।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টি দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে পেপল। প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারী ২৬টি মুদ্রায় পেপলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছেন। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পেপলকে ২০০২ সালে মার্কিন ই-কমার্স সাইট ই-বে কিনে নেয়