পোল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষা

পোল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে কিছু হায়ার ইনস্টিটিউট রয়েছে যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে ভোকেশনাল কোর্স করানো হয় এবং জব প্লেসমেন্টের জন্য সেগুলোর উপর বাস্তব চর্চাও করানো হয়। এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে পড়াশোনার খরচও কম। বর্তমানে পোল্যান্ডে প্রায় পাঁচ হাজার বিদেশিসহ প্রায় ১৪ লাখ ২১ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন পর্যায়ে পড়াশোনা করছে।
শিক্ষাব্যবস্থা
পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পোল্যান্ডের শিক্ষাস্তর প্রধানত ৪টি। এখানে পোল্যান্ডের শিক্ষাস্তরের সাথে বাংলাদেশের শিক্ষাস্তরের তুলনা দেয়া হলো যাতে এদেশের শিক্ষাস্তর সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা করা যায়।
পোল্যান্ডে একজন ছাত্রের শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রাইমারি অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন ধাপের মাধ্যমে এ ধাপের মেয়াদ ১২/১৩ বছর।এরপরই শিক্ষার্থীরা হায়ার এডুকেশন ধাপে পদার্পণ করতে পারে। এদের হায়ার এডুকেশন ধাপের কোর্সের নাম লাইসেনজেট অথবা ইঞ্জিনিয়ার এবং এ ধাপ সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৩/৪ বছর। এরপর শুরু
হয় প্রফেশনাল টাইটেল অ্যাওয়ার্ড প্রদান
পর্ব যাকে ম্যাজিস্টার কোর্স বলা হয় এবং এ ধাপের মেয়াদ ২ বছর। অপরদিকে আমাদের দেশে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রাইমারি ধাপের মাধ্যমে। এ ধাপের মেয়াদ ৫ বছর। তারপর শুরু হয় সেকেন্ডারি ধাপ যার মেয়াদ ৬ বছর। এরপর শুরু হয় হায়ার সেকেন্ডারি ধাপ যার মেয়াদ ২ বছর  এবং তারপর শুরু হয় গ্রাজুয়েশন কোর্স/অনার্স। যার মেয়াদ ৪ বছর। গ্রাজুয়েশনের পর শুরু হয় ১ বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্স।
পোল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত- ১. ইউনিভার্সিটি, ২. টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ৩. মেডিক্যাল একাডেমিস, ৪. এগ্রিকালচারাল একাডেমিস, ৫. ইকোনমিক্যালি একাডেমিস, ৬. হায়ার টিচার এডুকেশনাল স্কুল, ৭. একাডেমিস অব মিউজিক, ফাইন আর্টস, থিয়েটার এন্ড সিনেমাটোগ্রাফি, ৮. একাডেমিস অব ফিজিক্যাল এডুকেশন, ৯. থিওলজিক্যাল একাডেমিস, ১০. মারচেন্ট মেরিন একাডেমিস, ১১. মিলিটারি স্কুল, ১২. স্কুল অব পুলিশ, ১৩. স্টেট স্কুল অব হায়ার ভোকেশনাল এডুকেশন, ১৪. নন পাবলিক স্কুল, ১৫. নন স্টেট স্কুল অব হায়ার ভোকেশনাল এডুকেশন।

পড়াশোনার বিষয় : মিউজিকোলজি, মিউজিক্যাল এডুকেশন, ফটো, ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ক্যামেরা ইত্যাদি বিষয় পোল্যান্ডে সবচেয়ে আদর্শ হলেও অন্যান্য যুগোপযোগী বিষয়েও উচ্চশিক্ষা অর্জন করা যায়। যেমন- জার্নালিজম অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন্স, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, আর্ট এডুকেশন, ইকোনমিক্স, এডমিনিস্ট্রেশন, মেডিক্যাল এনালাইসিস, বায়োটেকনোলজি, ফার্মেসি, ফিলোসফি, জিওগ্রাফি, ইনফরমেটিক্স, ফরেস্ট্রি, ল, নার্সিং, থিওলজি, ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড হিউম্যান নিউট্রিশন, এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট টেকনোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, আর্কিওলজি, এথনোলজি, আর্ট হিস্ট্রি, কালচারাল স্টাডিজ, কালচারাল হেরিটেজ প্রোটেকশন, পেপার অ্যান্ড পলিগ্রাফসহ ইন্জিনিয়ারিং-এর অন্যান্য বিষয়।

পোল্যান্ডে বর্তমানে নার্সিং প্রোগ্রাম খুবই চাহিদাসম্পন্ন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা নার্সিংয়ে গ্রাজুয়েশন তাদের জন্য পোল্যান্ড সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। পোল্যান্ডে নার্সদের অত্যাধিক। যারা নার্সিংয়ে পড়াশোনা করবে তাদেরকে সাথে সাথে দেশে ওয়ার্ক পারমিট এমনকি পারমানেন্ট রেসিডেন্টশিপ গ্রহণের সুযোগ দিয়ে থাকে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে করলেই এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে।

যে ভাষায় পড়াশোনা : পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় ভাষা পোলিশ হলেও এখানে ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পোলিশ ভাষায় পড়ানো হয়। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পোলিশ ভাষায় দক্ষ হতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই দক্ষতার প্রমাণ দেখাতে হবে। নতুবা ইংরেজিতে খুব ভাল দক্ষতা থাকতে হবে।

পড়াশোনার খরচ : পোল্যান্ডে পড়াশোনা করতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাধারণত বছরে ২ হাজার ইউরো খরচ হয়। এ ছাড়া থাকা-খাওয়ার খরচ
তো আছেই।

কাজের সুযোগ : পোল্যান্ডের সরকার সে দেশে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা পার্টটাইম কাজের সুযোগ দেয়। আর জুন থেকে আগস্ট এ তিন মাস গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ফুলটাইম কাজের সুযোগ আছে। এখানকার জনবহুল ও ব্যস্ত নগরীগুলোয় কাজের সুযোগ তুলনামুলক বেশি। পোলিশ এবং ইংরেজিতে পারদর্শী হলে রেস্টুরেন্ট, দোকান ও শপিংমলে কাজ করে ৮-১২ ইউরো
আয় করা যায়।

আবেদন প্রক্রিয়া : পোল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, যেমন- এইচএসসি বা সমমান পাশ, ভষা দক্ষতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ফিটনেস ইত্যাদি অর্জিত হলে আপনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ভর্তির আবেদন পাঠাতে পারবেন।

ভিসা আবেদন দিল্লিতে : ঢাকায় পোল্যান্ডের কনস্যুলেট থাকলেও কোনো দূতাবাস নেই। ভিসার আবেদন করতে হয় ভারতের দিল্লির দূতাবাসে।

সৌজন্যে : দৈনিক ইনকিলাব