হোম পরীক্ষা চাকুরী উচ্চশিক্ষা

দেড় লাখ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের হদিস নেই!

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয় থেকে প্রায় দেড়লাখ সনদের সংরক্ষিত মূল কপি ও উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের যাবতীয় তথ্য হারানোর খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার নিউ মার্কেট থানা এলাকার নায়েম ক্যাম্পাসে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের কম্পিউটারে সফট কপি সংরক্ষিত থাকার কথা থাকলেও তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সংরক্ষিত হার্ড-কপিরও কোনও অস্তিত্ব নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাডটকমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি নিবন্ধন পরীক্ষা ও নিয়োগ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। এরই অংশ হিসেবে ১ম থেকে সর্বশেষ পরীক্ষা পর্যন্ত উত্তীর্ণ সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার বছর ও বিষয়ভিত্তিক মেধা তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের পর ১ম থেকে একাদশ পরীক্ষা পর্যন্ত উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের তথ্য খুঁজতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন ১ম থেকে ৫ম পরীক্ষা পর্যন্ত কোনও তথ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে সংরক্ষিত নেই। এমনকি এই সময়ের মধ্যে উত্তীর্ণ ১ লাখ ৪২ হাজার চারশত ৪৪টি সনদের সংরক্ষিত মূল কপিও নেই। এছাড়াও ২০১০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ পরীক্ষার কিছু এবং একই বছরে অনুষ্ঠিত বিশেষ নিবন্ধন পরীক্ষার কিছু সনদ পাওয়া যাচ্ছে না।

দেড় লাখ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের হদিস নেই

এমতাবস্থায় কীভাবে মেধাতালিকা তৈরি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তরা বলেন, ১ম থেকে ৫ম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১ লাখ ৪২ হাজার চারশত ৪৪ নিবন্ধধারীর সনদ ফেরত চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সনদ ফেরত পেলে বছর ভিত্তিক মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। ১ম থেকে ৫ম পরীক্ষা পর্যন্ত উত্তীর্ণদের গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনুরোধ করা হবে তারা যেন নিজ নিজ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে সনদগুলো জমা দেন। এদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে চাকুরীতে যোগদান করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন তাদের সনদ কীভাবে আনা হবে অথবা তারা কী আদৌ তাদের সনদগুলো কষ্ট করে জেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিতে আগ্রহী হবেন? আর সবাই জমা না দিলে একটি সম্পূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মেধা তালিকা তৈরি আদৌ সম্ভব হবে কি-না?  দৈনিকশিক্ষাডটকম সাংবাদিকদের এসব প্রশ্নের কোনও গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে পারেননি কর্মকর্তরা।

শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষাডটকমের রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষাতথ্য আর্কাইভ। এই আর্কাইভে সংরক্ষিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ১ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে এবং ৫ম পরীক্ষা ২০০৯-এ। এ সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত পাচঁটি পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৪২ হাজার চারশত ৪৪ জন উত্তীর্ণ হন। প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সনদ বিতরণ হয় ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ২য় পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সনদ বিতরণ হয় এনটিআরসি’র মাধ্যমে। এরপর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি পরীক্ষার সনদ বিতরণ হয় জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে। ১ম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৩ হাজার ৭৮৮ জন কিন্তু সনদ উত্তোলন করেননি সাড়ে তিন হাজারের বেশি। একইভাবে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কয়েকহাজার পরীক্ষার্থী তাদের মূল সনদই নেননি।

অতিরিক্ত সচিব মো. আজহার হোসেন নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। চলতি বছরে তিনি যোগদান করেছেন। তিনি দাবী করেন তিনি দক্ষ কারণ তিনি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকুরি করে এসেছেন। বিগত সবকজন চেয়ারম্যানই প্রশাসন ক্যাডারের যুগ্ম-সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের। এত সনদের মূল কপি কীভাবে হারানো গেল তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি কেউ। সাবেক কয়েকজন চেয়ারম্যানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে দৈনিকশিক্ষাডটকম সাংবাদিকরা। তারা বলেছেন তাদের সময়ে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল।

বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে কম্পিউটারের ডাটাবেজ ও অন্যান্য কাজ করেছে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের একজন সাবেক সদস্যের আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠান। কোনও টেন্ডার ছাড়াই তারা বিশাল কাজ পেয়েছেন টানা কয়েকবছর। ওই নারী সদস্য একজন যুগ্ম-সচিব ‍যিনি সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব হয়ে অন্যত্র পদায়ন পেয়েছেন।