দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আয়তন ক্রমশই কমে যাচ্ছে।
সময় ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেখানে শিক্ষার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সংখ্যা। সেখানে দিন-দিন কমে যাচ্ছে দেশসেরা এ বিদ্যাপীঠের আয়তন।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ২৫৪ একর। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালে ১৯২১ সালে এর মোট জমির পরিমাণ ছিল ৬৪০ একর। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর গত ৯৪ বছরে আয়তন কমেছে প্রায় আড়াই গুণ। কমে যাওয়া এ জমিতে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে জানা যায়, অমর একুশে হলের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ি। বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির স্থানে পুলিশদের জন্য ২০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও বর্তমানে তা স্থগিত রয়েছে।
এছাড়া স্যার এ এফ রহমান হলের পাশে ৩৯ দশমিক ০৭ একর জমিতে স্থাপন করা হয়েছে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি বা বেসরকারি যেভাবেই ঢাবির জমি দখল হয়ে থাকুক, তা ফিরে পাওয়া যাবে না। কারণ যেসব জমি দখল করে ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে, তা দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনে হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। তবে শাহবাগ থানা ও নিউমার্কেট থানা স্থাপনের পরেও পুলিশ ফাঁড়ির প্রয়োজন কতখানি এ বিষয়ে আমরাও চিন্তা করছি।
ড. আমজাদ জানান, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা, সচিবালয়সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের জমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এমনকি হাইকোর্ট, শিক্ষা ভবন, শিশু পার্ক এবং গ্রীন রোড এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ বিঘা জমির ১২ বিঘাই বেদখল হয়ে গেছে। মিন্টু রোড এবং হেয়ার রোডের যে বাংলোগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল তাও প্রায় বেদখলে।
এস্টেট অফিসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫০ একর জমি সরকারি ও বেসরকারি দখলে রয়েছে। এর মধ্যে কিছু জমি অবশ্য লিজ দেওয়া রয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন স্থাপনার দখলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২১০ একর জমি রয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগে নিউমার্কেট থানার জন্য ২ একর ৬৮ শতাংশ, ওসমানী উদ্যান ও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন এবং রেলওয়ের জন্য ২৪ একর ৩৯ শতাংশ, আনন্দবাজারের জন্য ৭ একর ২৩ শতাংশ এবং কর্মজীবী হাসপাতালের পূর্বদিকে ৩ একর ১৯ শতাংশ জমি সরকারিভাবে দখল করা হয়েছে।
এছাড়া লিজ দেওয়া রয়েছে ১০০ একরের অধিক জমি। যার মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিল, আনবিক শক্তি কমিশন ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ। তবে এর মধ্যে উদয়ন স্কুল প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি বিখ্যাত দার্শনিক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেবের (জিসি দেব) উইল করা ধানমন্ডির ৭ কাঠা জমি দখলে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু মসজিদ থাকায় সব জমি উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
দখলে নেওয়া ওই জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে জুনিয়র শিক্ষকদের জন্য আবাসিক ভবন ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৯৪ বছরে পা রাখা ঢাবিতে বর্তমানে এক হাজার ৯২৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬ হাজারের বেশি। বর্তমানে বিভাগ রয়েছে ৭২টি, ইনস্টিটিউট ১১টি, অনুষদ ১১টি, গবেষণা কেন্দ্র ৩৭টি এবং আবাসিক হল রয়েছে ২২টি।
অপরদিকে, সময়ের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন অনেক বিভাগ খোলা হচ্ছে। এই নতুন বিভাগ ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উন্মুক্ত ও নিরিবিলি পরিবেশের পরিবর্তে দিন দিন ঘিঞ্জি ও হট্টগোল পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. আমজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হওয়া জায়গা উদ্ধারে সরকার সহযোগিতা না করলে কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই।