জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য যত কিছু লাগে সব সরকার থেকে নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক । সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নে একটি প্রকল্প পেশ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাত একর বা দশ একর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ অন্যান্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কমপক্ষে ১০০ একরের মতো জমি লাগবে। কেরানীগঞ্জে সে জমির ব্যবস্থা করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপুকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, গতকালের একনেক সভায় ২৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নজরুল ইসলাম। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রকল্পের আওতায় কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সাড়ে সাত একর জায়গায় দুটি বড় ভবন নির্মাণ করা হবে। একটি ২০ তলা একাডেমিক ভবন এবং আরেকটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এক হাজার সিটের আবাসিক ছাত্র হল। প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেখার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই সাত একর, দশ একর দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান হবে না। পুরান ঢাকা যানজট এবং ঘিঞ্জি এলাকা। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সেটি অনুপযুক্ত জায়গা। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুচরা একটি হল ও একাডেমিক ভবন দিয়ে কাজ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, ক্যাম্পাস, একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরিসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে। আর সেটি করতে হলে অন্তত ১০০ একর জমি লাগবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যত জমি লাগবে, যত টাকা লাগবে, তার জোগান দেওয়া হবে। সে জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করে তাঁর কাছে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এখন যেখানে আছে, সেখানে নতুন করে আর কিছু না করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সব ধরনের অবকাঠামো পরিকল্পিতভাবে কেরানীগঞ্জে করার কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। যে প্রকল্পটি একনেক সভায় ওঠানো হয়েছিল, সেটি মুলতবি করে পুনর্গঠিত প্রকল্প তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান ক্যাম্পাস কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর হচ্ছে কি না এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু বলেছেন কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করতে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুরান ঢাকায় ব্রাহ্ম স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরুর পর একপর্যায়ে কলেজ, এরপর ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হলেও শিক্ষার্থীদের হলসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হলের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
৯ প্রকল্প অনুমোদন : সভায় চট্টগ্রামের লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে ১৯১ কোটি টাকা। ২০২০ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকার জোগান দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম শহর এলাকা ও এর দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে উন্নত যোগযোগব্যবস্থার সুযোগ, চট্টগ্রাম শহরকেন্দ্রে ভ্রমণ দূরত্ব ও ভ্রমণ সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি বিদ্যমান যানজট নিরসন ও বিমানবন্দরে যাতায়াতপথ সুগম করতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গতকাল একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, একনেকে ছয় হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে পাঁচ হাজার ৯০৬ কোটি, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫৭ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য বাবদ ৪৩০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৮৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ কিলোমিটর দীর্ঘ পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল সড়ক উন্নয়ন, ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুর জেলার তিনটি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও এনভায়রমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করা, ৫৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়েবিলিটি অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নরসিংদী জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়িয়াল খাঁ নদ, হাড়িদোয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখানদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখানদ পুনঃখনন প্রকল্প, ৪৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সীমান্ত নদীতীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষিশুমারি ২০১৮ প্রকল্প এবং ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইকগাছা কৃষি কলেজ স্থাপন প্রকল্প।
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ