বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতির জন্য আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন, অন্তত দুটি জব সলিউশন, পেপার, ইন্টারনেট, অন্তত তিন-চারটি গাইড বই আর কিছু রেফারেন্স বইয়ের দরকার হবে। কিছু টিপস দিচ্ছি, এগুলো পড়ে নিজের মতো করে কাজে লাগাবেন।
* প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন। একেবারেই সামপ্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসবে বড়জোর সাত-আটটি, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্তত দুই-তিনটি পত্রিকা পড়ে উত্তর করা যায়। বাকি চার-পাঁচটিকে মাফ করে দিলে কী হয়!
* গাইড বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রেফারেন্স বই-যেমন, মোজাম্মেল হকের উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি দ্বিতীয়পত্র, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে বই (যেমন, আরিফ খানের সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান), মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই (যেমন, মঈদুল হাসানের মূলধারা : ‘৭১), নীহারকুমার সরকারের ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নাগরিকদের জানা ভালো, আকবর আলি খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি, আব্দুল হাইয়ের বাংলাদেশ বিষয়াবলি ইত্যাদি বই পড়ে ফেলুন। বিসিএস পরীক্ষার জন্য যেকোনো বিষয়ের রেফারেন্স পড়ার একটা ভালো টেকনিক হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের জন্য না পড়ে, মার্কস অর্জনের জন্য পড়া। এটি করার জন্য প্রচুর প্রশ্ন স্টাডি করে খুব ভালোভাবে জেনে নেবেন কোন কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে না। প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখে, এর পর রেফারেন্স বই থেকে বাদ দিয়ে-দিয়ে পড়ুন। এতে অল্প সময়ে বেশি পড়তে পারবেন।
* চার ঘণ্টা না বুঝে স্টাডি করার চেয়ে এক ঘণ্টা প্রশ্ন স্টাডি করা অনেক ভালো। বুঝে পড়লে চার ঘণ্টার পড়া দুই ঘণ্টায় সম্ভব। বেশি বেশি প্রশ্নের প্যাটার্ন স্টাডি করলে, কিভাবে অপ্রয়োজনীয় টপিক বাদ দিয়ে পড়া যায়, সেটি শিখতে পারবেন। এটি প্রস্তুতি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ। এর জন্য যথেষ্ট সময় দিন। অন্যরা যা যা পড়ছে, আমাকেও তা-ই তা-ই পড়তে হবে-এ ধারণা ঝেড়ে ফেলুন। সব কিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। একটি অপ্রয়োজনীয় টপিক একবার পড়ার চেয়ে প্রয়োজনীয় টপিকগুলো বারবার পড়ুন।
* অনলাইনে চার-পাঁচটি পত্রিকা পড়বেন। পুরো পত্রিকা না পড়ে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় টপিকের আর্টিকেলগুলোই শুধু পড়বেন। একটি পত্রিকায় এ ধরনের দরকারি লেখা থাকে খুব বেশি হলে দুই-তিনটি। প্রয়োজনে সেগুলোকে ওয়ার্ড ফাইলে সেভ করে রাখুন, পরে পড়ে ফেলুন।
* একটি জিনিস মনে রাখতে না পারলে আবারও পড়ুন। এর পরও মনে রাখতে না পারলে আরো একবার পড়ুন। যদি এর পরও মনে না থাকে, তবে সেটি মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন। একটি কঠিন প্রশ্ন মনে রাখার চেষ্টা পাঁচটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়। কী লাভ! কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর।
* সাল-তারিখ মনে থাকে না। এটি কারোরই থাকে না। বারবার পড়তে হয়। অনেক সেট প্রশ্ন পড়ার সময় ও রকম সাল-তারিখ বারবার আসবে। বিভিন্ন তথ্য মনে না থাকলে বারবার রিভিশন দিন। মুখস্থ না করে প্রশ্নের একটি ছবি মনে গেঁথে নিন। ফেসবুকে সামপ্রতিক নানা তথ্যসংবলিত পোস্টগুলো বেশি বেশি পড়ুন।
* আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির কিছু কিছু প্রশ্ন সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা হারায়। সেগুলো বাদ দিন। সব চেয়ে ভালো হয়, যদি বিভিন্ন টপিক ধরে ধরে গুগলে সার্চ করে করে পড়েন। প্রয়োজনে টপিকের নাম ইউনিকোডে বাংলায় টাইপ করে সার্চ করুন। গুগলে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই পাবেন।
* বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতা নিয়মিত দেখবেন। সামপ্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানা আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদর দপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
* ম্যাপ মুখস্থ করতে বসবেন না যেন! ওটি করতে যে সময় নষ্ট হবে, ওই সময় পড়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। ছড়া-গান-কবিতা দিয়ে মুখস্থ করা স্রেফ সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছুই না।
* গ্রুপ স্টাডির একটি বাজে দিক হচ্ছে, যে যা-ই বলে, সেটিকে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। এই যেমন ‘সংবিধান মুখস্থ করতে না পারলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যাবে না’-এ রকম কিছু ভুল কথাকেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। পাবলিক লাইব্রেরিতে কিংবা এর সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেও কোনো কাজ হবে না, যদি নিজে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করে পড়াশোনা না করেন।
অঙ্ক-ইংরেজি ভালো জানলে ভালো মার্কস পাওয়া যাবেই-তা বলা যায়। কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে খুব দক্ষ হলেই যে ভালো মার্কস পাওয়া যাবে-এমনটা নাও হতে পারে। তাই সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় আবেগ নয়, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পড়ুন। সাধারণ জ্ঞানে অতি-পরিশ্রম নয়, হিসেবি-পরিশ্রম করুন। আর একটি ব্যাপার মাথায় রাখবেন-সাধারণ জ্ঞানে আপনার চেয়ে অনেক ভালো জানেন-এমন কারোর সঙ্গে যত কম আলোচনা করবেন, আপনার প্রস্তুতি ততই ভালো হবে! সাধারণ জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যাতে আপনার জানার পরিধি একেবারে জিরো লেভেলে থাকলেও আপনি সেটিকে পরিশ্রম করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় লেভেলে উন্নীত করতে পারবেন।
দুই-তিন সেট মডেল টেস্টের গাইড থেকে প্রতিদিনই অন্তত দুই-তিনটি টেস্ট দিয়ে দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন। সব কথার শেষ কথা : বিসিএস মানেই সাধারণ জ্ঞান-এ ভুল আপ্তবাক্যটি মাথায় না রেখে সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রস্তুতি নিন।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ