চলতি মাসেই শুরু হতে যাচ্ছে স্কুল ভর্তি কার্যক্রম। প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও এবার নির্বাচনের জন্য ভর্তি কার্যক্রম কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। পূর্বের মতো ভর্তি কার্যক্রমে নির্ধারিত কোটা বহাল থাকছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ গত বছর ২৫ অক্টোবর থেকে আবেদন শুরু করলেও এ বছর ১০ আক্টোবর থেকে আবেদন কার্যক্রম শুরু করবে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন ফি ২০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণির আবেদন শেষে উন্মুক্ত লটারির আয়োজন করা হবে। বিস্তারিত ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। ২য় থেকে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত বার্ষিক পরীক্ষার পর।
প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির এক সদস্য জানান, এবার বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচিও এগিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও আবেদন নেয়ার সময় এগিয়ে এনেছে। তারা ৩০ অক্টোবর থেকে অনলাইনে আবেদন নেবে। সরকারি হাইস্কুলের ভর্তি কার্যক্রমও এগিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে।
এদিকে বেসরকারি হাইস্কুলে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, ৬ বছর ও এর বেশি বয়সীরা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারছে। এর কম বয়সীদেরও বিভিন্ন স্কুল ভর্তি নিচ্ছে। সাধারণত রাজধানীর বিখ্যাত ও মানসম্মত স্কুলের বেশির ভাগে প্রাক-প্রাথমিক স্তর আছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে কোথাও শিশু শ্রেণি, কোথাও প্লে বা নার্সারি স্তর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে। এমন স্কুলগুলোর একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদয়ন স্কুল।
উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালেমা বেগম বলেন, ‘আমরাও শিশু শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর এন্ট্রি পয়েন্ট করেছি। এবার দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণিতেও শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হবে। তবে প্রথম শ্রেণিতে আসন খালি নেই।’
জানা গেছে, এই স্কুলে ৩০ অক্টোবর থেকে আবেদন করা যাবে। ৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম। এই স্তরে বাংলা ভার্সনে ১২০ এবং ইংরেজি ভার্সনে ৬০ জন নেয়া হবে এবার। দুই-একদিনের মধ্যে ভর্তির সার্কুলার জারি করা হবে।
এদিকে রাজধানীর উইলস লিটল স্কুল ও কলেজে ভর্তি কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আগামী সপ্তাহে। তবে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে ভর্তির আবেদন নেয়ার সময়সূচি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুল ও কলেজে নার্সারি থেকে ভর্তি নেয়া হয়। আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন নেবে বলে জানান এর প্রধান শিক্ষক আশুতোষ চন্দ্র সরকার। ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল ও কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি নেয়া হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তির ফরম বিতরণ শুরু হবে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
অন্যদিকে সরকারি হাইস্কুলের ভর্তির বিষয়ে দুই-চারদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানা গেছে। রাজধানীর ৩৭টি হাইস্কুলের মধ্যে ১৬টিতে প্রথম শ্রেণি আছে। বাকি স্কুলের কোনোটিতে তৃতীয় বা তার ওপরের বিভিন্ন শ্রেণিতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। গত বছর ৩০ নভেম্বর দিবাগত রাতে এসব স্কুলে ভর্তির আবেদন নেয়া শুরু হয়।
দেখা গেছে, প্রতি বছর ঢাকায় গড়ে ২ লাখের বেশি শিশু প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিন্তু মাত্র ৪৫-৫০ হাজার শিশু পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারছে। অপরদিকে ঢাকা শহরে প্রায় অর্ধলাখ কিন্ডারগার্টেন ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। আছে তিন শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অবশ্য সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলো অভিভাবকদের পছন্দের বিচারে সামনের দিকে নেই।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এবার ভর্তি কার্যক্রম কিছুটা এগিয়ে আনা হচ্ছে। নীতিমালার খসড়া তৈরি হচ্ছে।
প্রস্তাবিত নীতিমালায় সব সরকারি হাইস্কুলে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করার কথা আছে। এ ছাড়া আগের তিন বছরের মতো এবারও এ ধরনের স্কুলে মোট আসনের ৫৯ শতাংশ কোটায় ভর্তির প্রস্তাব আছে। এগুলো হচ্ছে, ‘এলাকা’, ‘সরকারি প্রাইমারি স্কুল’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘প্রতিবন্ধী’ এবং ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী’ কোটা। গত বছর সরকারি স্কুলে আবেদনের ফি ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা করা হয়েছিল। তবে এবার ফি বাড়ানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই।