এবার এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর পুনরায় খাতা দেখার চ্যালেঞ্জ করেছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থী। এরা সবাই মোবাইল ফোনে এসএসএম করে খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর খাতা পুনর্মূল্যায়নের সংখ্যা বাড়ছে। তিন বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৩ জন। ২০১৪ সালে ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলেন মাত্র ৪৩ হাজার ২২৫ জন। এক বছরের ব্যবধানে গত বছর সেটি দাঁড়ায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০১ জন। এবার সেটি হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ জন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এইচএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণে এবার রেকর্ড গড়েছে। সন্তোষজনক রেজাল্ট না হওয়ায় এবার পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন পড়েছে বেশি। যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ১০ ভাগ।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্ন পদ্ধতি ও খাতা দেখার নানা ত্রুটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতি বছর অভিভাবকদের অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। তারা বলেন, এবার বরিশাল বোর্ডে যা হয়েছে তা রীতিমত তুঘলকি কাণ্ড। একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বোর্ড কর্তৃপক্ষের ঘুম ভেঙ্গেছে। পরবর্তীতে ফল যাচাই করে একটি বোর্ডে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ফেল থেকে পাস করেছে এক হাজার ১৪১ জন। ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯ জন।
বোর্ড জানায়, প্রধান দুই পরীক্ষকের ভুলের কারণে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ‘খ’ ও ‘গ’ সেটের নৈমিত্তিক উত্তরপত্রের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।
একই অবস্থা ছিল চট্টগ্রাম বোর্ডেও। গণিতের ফল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভের মুখে ১৯শে মে নতুন করে ফল প্রকাশ করে এ বোর্ড। এতে গণিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে আরও ১ হাজার ১১৫ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে আরও ৮৩৬ জন।
ভুক্তভোগী নাজরীন সোমা নামের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ভালো পরীক্ষা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট জিপিএ-৫ পায়নি সে।
তার বাবা মোতাহার আলী বলেন, আমার মেয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে শেষ পর্যন্ত ক্লাসের ফার্স্ট ছিল। প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। এমনকি প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষায় তার তিনটি বিষয়ের ফল খারাপ এসেছে। পদার্থ বিজ্ঞানে সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা দিলেও এই বিষয়ে সে ‘এ’ মাইনাস পেয়েছে। গণিত এবং বাংলায় এসেছে ‘এ’ গ্রেড। তাই ফল চ্যালেঞ্জ করেছেন।
বোর্ড সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনা ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গণিত বিষয়ের সংশ্লিষ্ট উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়। পুনঃনিরীক্ষণে বোর্ডে টেকনিক্যাল ভুল ছিল বলে প্রমাণ হয়। অভিভাবকরা জানান, প্রতিবছর লাখের ওপর শিক্ষার্থী ফল পরিবর্তন করে তাদের ফল পরিবর্তন হচ্ছে। এতেই প্রমাণ হয়, বোর্ড ও পরীক্ষকদের ভুল আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ সাংবাদিকদের বলেন, ভুলের জন্য তো চ্যালেঞ্জ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনি নিজেও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী অভিভাবকরা এখন অনেক বেশি সচেতন। এজন্য খাতা চ্যালেঞ্জ সংখ্যা বাড়ছে।