অনেক জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে বিসিএস ভাইভার দিনটা আসলো। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কারো কাছে দোয়া চাইতে গেলে বলছি, ভাইভা ভাল হোক এই দোয়া করা লাগবে না, শুধু দোয়া কইরেন ‘ওয়াজেদ আলীর’ বোর্ডে যেন না পড়ি। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত কারো দোয়াই কাজে লাগে নাই…
৩৪ তম বিসিএস (ভাইভা)
বোর্ড : এস ওয়াজেদ আলী স্যার (মোট্ ৩ জন)
প্রার্থী : পদার্থ বিজ্ঞান (জা: বি:)
১ম চয়েজ : বিসিএস (প্রশাসন)
দরজায় দাড়িয়ে কলিং বেল বেজে উঠার অপেক্ষা করছি। একটু পরেই আমার কল আসবে। মনে মনে দুয়া-দুরুদ জপছি আর কাঁপছি।
বেল বাজলো, যথারীতি দরজা খুলে ওয়েটিং রুম থেকে বোর্ড রুমে প্রবেশ …..
==================
প্রার্থী : স্যার আসতে পারি ….।
এস ওয়াজেদ আলী : হুম, yes.
প্রার্থী : টেবিল-সিটের কাছে এসে, আস-সালামু-আলাইকুম।
এস ওয়াজেদ আলী : মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন। ইঙ্গিত দিয়ে বসতে বললেন। এরপর বসতে না বসতেই শুরু করলেন … “Introduce yourself ……
প্রার্থী : কমন প্রশ্ন, ইংরেজিতে বললাম।
এস ওয়াজেদ আলী : ১ম চয়েজ কি?
প্রার্থী : স্যার, বিসিএস (প্রশাসন)
এস ওয়াজেদ আলী : প্রশাসন কেন ১ম চয়েজ?
প্রার্থী : আবারও কমন প্রশ্ন! তোতা পাখির্র মত মুখস্থ করা উত্তর সুন্দর করে বললাম।
(মনে হয় একদম পছন্দ করলো না, পাত্তা দিল না)
বোর্ড মেম্বার (external) : আচ্ছা, তুমি জাবি থেকে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছ। পদার্থ আর অপদার্থ এর মধ্যে পার্থক্য বলো।
প্রার্থী : উত্তর দিলাম।
বোর্ড মেম্বার (external) : এখন তুমি কি করছো?
প্রার্থী : স্যার, একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছি।
এস ওয়াজেদ আলী : হুম। একটু গম্ভীরভাবে বললেন – ভাইভার জন্য ভাল প্রিপারেশন নিয়েছতো?
প্রার্থী : জি স্যার।
এস ওয়াজেদ আলী : কী কী বই পড়েছো, নাম বলো …।
প্রার্থী : চিন্তায় পড়লাম ….. বাজারের ২ টা ভাইভা গাইডইতো অনেক পড়েছি। আগেই জানতাম, এস ওয়াজেদ আলী খুব রাগী মানুষ। বাজারের বইয়ের নাম বললে রুম থেকে বের করে দিবে। যাহোক বুদ্বি খাটিয়ে সংবিধান, কিছু বোর্ড বই, কয়েকটা রেফারেন্স বই এবং মুক্তিযুদ্বের ইতিহাস নিয়ে লেখা একটা বইয়ের নাম বললাম।
এস ওয়াজেদ আলী : ঠিক আছে। বলতো, হেনরি কিসিঞ্জার কে ছিলেন?
প্রার্থী : স্যার, হেনরি কিসিঞ্জার আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী (secretary of state) ছিলেন। ১৯৭১ সালে তার সুপারিশেই সপ্তম নৌবহর পাঠানো হয়েছিল।
এস ওয়াজেদ আলী : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্বের সময় হেনরি কিসিঞ্জারের পদবি ছিল কী ?
প্রার্থী : চুপ থাকলাম। স্যার এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না।
এস ওয়াজেদ আলী : no no. directly বলো তুমি জান না।
প্রার্থী : জি স্যার।
এস ওয়াজেদ আলী : বলো, মুজিব ব্যাটারী কী?
প্রার্থী : স্যার, দুঃখিত। আমি জানি না।
বোর্ড মেম্বার (external) : হোম ডিস্ট্রিক্ট যেন কোথায়?
প্রার্থী : স্যার, পঞ্চগড়, তেঁতুলিয়া উপজেলা।
এস ওয়াজেদ আলী : তেঁতুলিয়া নদী কোথায়?
প্রার্থী : স্যার, দুঃখিত। (পরে জেনেছিলাম, তেতুলিয়া নদী ভোলা জেলায়)
এস ওয়াজেদ আলী : তুমি দেখি কিছুই পড়ে আসনি, কোন প্রিপারেশনই নেওনি। শেষ কয়েকটা সপ্তাহ কি করেছ?
প্রার্থী : স্যার, স্যার, আমি ….। (আশা ছেড়ে দিলাম, ভাবলাম এবারও হবে না)
এস ওয়াজেদ আলী : বলো কি করেছো? বলো ….। (খানিকটা রেগে)
প্রার্থী : স্যার, শেষ কয়েকটা দিন আমি বেশি বেশি নফল ইবাদত করেছি আর আল্লাহর কাছে একটা প্রার্থনা করেছি।
এস ওয়াজেদ আলী : কি প্রার্থনা করেছ? বলো ….।
প্রার্থী : স্যার, স্যার ….. স্যার সেটা বলা যাবে না।
এস ওয়াজেদ আলী : না না। তোমাকে বলতেই হবে, কি প্রার্থনা করেছ? কি চেয়েছো?
প্রার্থী : স্যার…স্যার…স্যার… (চিন্তা আর ভয়ে অস্থির হয়ে গেলাম। কি চেয়েছি সেটা আমিই জানি। কিন্তু সেটা বললেতো আমায় রুম থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে)
এস ওয়াজেদ আলী : না। বলতে তোমাকে হবেই। (ওয়াজেদ স্যার নাছেরবান্দা)
প্রার্থী : স্যার, আমি আপনার বোর্ড ৩য় বারের মত ভাইবা দিচ্ছি। এর পূর্বে লিখিত পরীক্ষা খুব ভাল দিয়েও ক্যাডার পাইনি। এবার তাই……., আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, “আপনার বোর্ড এ যেন না পড়ি”।
এস ওয়াজেদ আলী : মুচকি হাসি দিয়ে পাশের ম্যাডামের দিকে তাকালেন।
বোর্ড মেম্বার (ম্যাডাম) : হাসলেন আর বললেন, এর পূর্বেও স্যারের বোর্ডে ২ বার ভাইবা দিয়েছো?
প্রার্থী : জি ! জি, ম্যাডাম।
বোর্ড মেম্বার (external) : এবার লিখিত পরীক্ষা কেমন দিয়েছো?
প্রার্থী : স্যার, আল-হামদুলিল-আল্লাহ, ভাল।
……
…..
…..
আরও ২/১ মিনিট বোর্ডে ছিলাম। বাকিটা দরকার নেই।
==================
ফলাফল :
৩৪ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত
==================
যিনি ক্যাডার হলেন, কালেক্টেড : সামাদ আজাদ
সূত্র: ক্যাম্পাসলাইভ২৪