আলবেনিয়া হলো দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান দেশসমূহের একটি ছোট্ট দেশ। দেশটিতে প্রায় ৩০ লাখ জনগোষ্ঠী বসবাস করে। দেশটির রাজধানী তিরানা। দাফতরিক ভাষা আলবেনিয়ান। অধিকাংশ যুবক ইংরেজি, ইতালিয়ান ও গ্রিক ভাষায় কথা বলে।
দেশটির বর্তমান মাথাপিছু আয় প্রায় ৫ হাজার ৩০০ ডলার। মুদ্রা হচ্ছে লেক। গ্রিস, মেসিডোনিয়া, কসোভো, মন্টিনিগ্রো ও একপাশে ইতালির আদ্রিয়াটিক সাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার আয়তন প্রায় ২৮ হাজার ৭৪৮ বর্গমাইল। দেশটিতে ৭৫% মুসলিম ও ২৫% খ্রিষ্টান রয়েছে। সাংবিধানিক কোন ধর্ম নেই। ইউরোপের সর্বোচ্চ সম্প্রীতির দেশ। ১৯১২ সালের ২৮ নভেম্বর অটোমান সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
আলবেনিয়ার জিডিপি ১৩.৩৬৭ বিলিয়ন ডলার (নমিনাল) এবং ৩৬.৫২৪ বিলিয়ন ডলার (পিপিপি)। বর্তমান জিডিপি গ্রোইং রেট ৩.৬% (২০১৮ইং)। দেশটির জিডিপির অধিকাংশ আসে সার্ভিস সেক্টর থেকে, যা প্রায় ৬৩.৫% এবং এগ্রিকালচার থেকে প্রায় ২১.৬% এবং ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রায় ১৪.৯%। অধিকাংশ মানুষ এগ্রিকালচার ও সার্ভিস সেক্টর পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে দেশটি অনেকটাই পিছিয়ে। শিল্প প্রতিষ্ঠান ১১.৪% যা খুবই নগণ্য।
১৯৯০ সালে আলবেনিয়া ইউরোপের সবচেয়ে গরিব দেশ ছিল। ২০০৮ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে আখ্যায়িত হয়। সোশ্যালিস্ট পার্টির কর্নধার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এডি রামা ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। ২০০৪ সালে তিনি বিশ্বের সেরা মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দেশটির মানুষ খুবই অতিথিপয়ারণ। তাই আন্তর্জাতিক পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেখানে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিয়নের বেশি পর্যটক বেড়াতে যায়।
বিনিয়োগ শর্ত: আলবেনিয়ায় ব্যবসা করতে চাইলে কতগুলো শর্ত মেনে করতে হবে। শর্তগুলো নিম্নরূপ-
১. সর্বনিম্ন ২৫ হাজার ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় ২৫ লাখ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
২. ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে।
৩. লাইসেন্সের স্বত্ত্বাধিকারী বা লিমিটেড কোম্পানি হতে পারে।
৪. ব্যবসা ও বসবাসের অনুমতি থাকতে হবে।
৫. আলবেনিয়ান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।
ইকোনমিক জোন: ইতোমধ্যে গভর্নমেন্ট অব আলবেনিয়া বিজনেস ইকোনমিক জোন ঘোষণা করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ডুরেস সমুদ্র বন্দরের কাছাকাছি ৫০০ হেক্টর জমি বরাদ্দ করেছে ফরেন ইনভেস্টমেন্টের জন্য। এ প্রোগ্রামে যে কোন বিদেশি সেখানে বিনিয়োগ করতে পারবেন সম্পূর্ণ নিজ মালিকানায়।
অগ্রাধিকার ব্যবসা: বর্তমানে দেশটিতে ট্যুরিজম, এগ্রিকালচার, আইসিটি, ট্রান্সপোর্ট এবং লজিস্টিকস রিনিওয়েবল এনার্জি, মেনুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি ও মাইনিং ইন্ডাস্ট্রির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সালের জুন মাসে দেশটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে দেশটি সেনজেন কান্ট্রি প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করছে।
বাণিজ্য চুক্তি: ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আলবেনিয়ান সরকার নিম্নোক্ত দেশসমূহের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে- অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বেলজিয়াম, বসনিয়া ও হারজেগভিনা, বুলগেরিয়া, চীন, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, মিশর, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইরান, ইসরাইল, ইতালি, কসোভো, কুয়েত, লিথুনিয়া, মেসিডোনিয়া, মালটা, মালয়েশিয়া, মলডোভা, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, রোমানিয়া, রাশিয়া, সান মারিনো, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তিউনেশিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
সাফটা ও ইফটা চুক্তি: আলবেনিয়ান সরকার ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে। দেশটি সাফটা ও ইফটা চুক্তিও করে। সাফটাভুক্ত দেশ হলো- মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া ও হারজেগভিনা, কসোভো ও মলডোভা। আর ইফটাভুক্ত দেশ হলো- সুইজারল্যান্ড, লিয়েসথেন্সটাইন, নরওয়ে ও আইসল্যান্ড।
ভিসা ও বসবাস: যে কোন বিদেশি আলবেনিয়ায় ভিসা ও রেসিডেন্স পার্মিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভিসার তেমন কোন জটিলতা নেই। বাংলাদেশে আলবেনিয়ান দূতাবাস নেই। সাধারণত ভিসা নিতে হয় চীন থেকে। আলবেনিয়া যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রেসিডেন্স পার্মিট দেওয়া হয়। রেসিডেন্স পার্মিট কার্ড পাওয়ার পরই আর কোন ভিসার প্রয়োজন হয় না। রেসিডেন্স পার্মিট কার্ড থাকলেই যে কোন সময় টিকিট কেটে যাতায়াত যায়। বিশ্বে আলবেনিয়ান পাসপোর্ট র্যাঙ্ক হলো ৪৭তম। কোন বিদেশি বৈধভাবে ৫ বছর থাকলেই আলবেনিয়ার নাগরিকত্ব ও পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আলবেনিয়ান পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ১১৪টি দেশে ফ্রি অ্যাকসেস করা যায়।
ক্যারিয়ার গড়বেন কেন
১. বিশ্বে ১৮২টি দেশের মধ্যে ইজি বিজনেস ডুইং কান্ট্রি হিসাবে যার অবস্থান ৬৫তম।
২. ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী দুর্নীতি পরায়ন রাষ্ট্র হিসাবে ১৮০টি দেশের মধ্যে যার অবস্থান ৯১তম।
৩. ইক্যুয়াল ট্যাক্স অপরচুনিটি অর্থাৎ ফরেন ও আলবেনিয়ানদের জন্য একই ট্যাক্স নীতিমালা।
৪. লিবারেল ও ইনফরমিস্ট বিজনেস ক্লাইমেট।
৫. বৃহৎ বাজারে মুক্ত প্রবেশাধিকার।
৬. অনুকূল ভৌগলিক অবস্থান।
৭. কম্পিটেটিভ লেবার কস্ট।
৮. ফ্রি ইকোনমিক জোন।
৯. নাগরিকত্বের জন্য আবেদন সহজ।
১০. ইনসেনটিভ অন স্পেসিফিক বিজনেস।
১১. ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট ফ্যাসিলিটিজ।
১২. ডিরেক্ট মালিকানা (কোন অংশদারিত্ব না দিয়ে)।
১৩. পটেনশিয়াল গ্রোইং কান্ট্রি।
১৪. ৯৯ বছরের জন্য জমি লিজ নেওয়া।
১৫. প্রয়োজনীয় প্রাইভেট ল্যান্ড প্রোপার্টি ও ফ্ল্যাট কেনা।
১৬. সহজ ভিসা ও রেসিডেন্স পার্মিট সিস্টেম।
১৭. বিশ্ব সম্প্রীতির দেশ ‘নো কান্ট্রি রিলিজন’।
ভ্রমণ: সাধারণ ভ্রমণের জন্য এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুব ভালো সময়। এ সময় প্রচুর ট্যুরিস্টের আনাগোনা থাকে। তবে বিনিয়োগের আগে আলবেনিয়া ঘুরে আসাটা বুদ্ধিমানের কাজ। বিনিয়োগের জন্য আপনি সরাসরি আইডাতে (আলবেনিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার বিজনেস ক্যাটাগরি ও বিজনেস সেটআপমেন্টের জন্য একজন দক্ষ কনসালটেন্ট বা আলবেনিয়ান অ্যাটর্নি ব্যবহার করতে পারেন।