পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক ও মাদরাসায় ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। গত বছর সব ক’টি বিষয়ের বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) ফাঁস হওয়ায় এবারের সমাপনীতে তা বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে পরীক্ষার্থীদের ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতে ১০০ নম্বর করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরীক্ষার প্রশ্নের নিরাপত্তায় এবার শিক্ষা বোর্ডগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে এবার প্রশ্নের নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ২০৪টি কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে ন্যূনতম অবহেলা বা অনিয়মের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাবলিক পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন (বিশেষ করে স্মার্ট ফোন) ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ প্রশ্ন সংগ্রহ না করা এবং প্রশ্ন খোলার সময় তিনজন দায়িত্বপ্রাপ্তের উপস্থিতি নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবারো দেশের ৬৪ জেলাকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করে আট সেট প্রশ্নে সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে। কোন জেলা কোন অঞ্চলে থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই’র) শীর্ষ কর্মকর্তারা গোপনীয়তার সাথে নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয় ও ডিপিই’র কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আট অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নপত্র ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। কোনো জেলার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেলে শুধু ওই জেলার শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। কারণ পাশের জেলাটি কোন অঞ্চলে পড়েছে তা গুটিকয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের জানা নেই। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ৩২ সেট প্রশ্নের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে আট সেট প্রশ্ন বাছাই করে ছাপানো হয়েছে। ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, লটারির মাধ্যমে আটটি অঞ্চলে আটটি করে জেলাকে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষার দিন এসব জেলার হিসাব পাল্টে যাবে। সে অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নের সেট নির্দিষ্ট জেলায় পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও ডিপিই’র দেয়া তথ্যানুসারে, এবারের (প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে) সমাপনী পরীক্ষায় ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ১২৩ জন খুুদে শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিকে ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ২৭০ জন এবং ইবতেদায়িতে তিন লাখ ১৭ হাজার ৮৫৩ জন পরীক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় প্রাথমিকে ২৮ হাজার ৮২৬ জন কম। ইবতেদায়িতে গত বছরের তুলনায় ২৩ হাজার ৪৭২ জন ছাত্রছাত্রী বেশি। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, ২০১৮-এ ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৮৬ জন বেশি। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিন হাজার ২৯৪ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে, এরা অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বেশি পাবে।
ঘোষিত পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী শুরুর দিন আজ প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সাত হাজার ৪১০টি স্কুল ও মাদরাসা এবং বিদেশের ১২টি কেন্দ্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। আর ২০১০ সাল থেকে ইবতেদায়িতে এ পরীক্ষা হচ্ছে। প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল দেয়া হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে শিশুদের এই পরীক্ষার ফল দেয়া হচ্ছে। আগে এ পরীক্ষার সময় ছিল দুই ঘণ্টা। ২০১৩ সাল থেকে পরীক্ষার সময় আধঘণ্টা বাড়িয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়েছে।
প্রাথমিক সমাপনীর পরীক্ষাসূচি
আজ ১৮ নভেম্বর ইংরেজি, ১৯ নভেম্বর বাংলা, ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ২২ নভেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২৫ নভেম্বর গণিত এবং ২৬ নভেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা।
ইবতেদায়ি সমাপনীর পরীক্ষাসূচি
আজ ১৮ নভেম্বর ইংরেজি, ১৯ নভেম্বর বাংলা, ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান, ২২ নভেম্বর আরবি, ২৫ নভেম্বর গণিত এবং ২৬ নভেম্বর কুরআন ও তাজবিদ এবং আকাইদ ও ফিকাহ।