প্রশ্ন ফাঁস রোধে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে: শিক্ষামন্ত্রী

কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে হাঁড় কাপানো শীত। প্রকৃতির এমন খামখেয়ালিপনাও বাদ সাধতে পারেনি ঢাকা স্টেট কলেজের রজতজয়ন্তী উৎসবে। এ উপলক্ষে  শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শহীদ পার্ক মাঠ পরিণত হয়েছিল কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায়। দিনভর নাচ-গান, আড্ডা, স্মৃতিচারণ ২৫ বছর পূর্তির উষ্ণ আয়োজন মুছে দিয়েছে শীতের সব কষ্ট।

সকালে ব্যান্ড পার্টি, ঘোড়ার গাড়ি, রঙবেরঙের পোশাক আর ব্যানার-ফেস্টুনের সাজে শোভাযাত্রা সূচনা হয় উৎসবের। এরপর পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে রজতজয়ন্তীর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১১ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, দৈনিক সমকাল সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শতভাগ সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ফাঁসসহ কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের আধাঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। ভবিষ্যতে আইন করে স্থায়ীভাবে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নৈতিকতার বিষয়ে তিনি বলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পেছনে যেন অভিভাবকরা না ছোটেন। তিনি প্রশ্ন ফাঁস রোধে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

নাহিদ বলেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক উন্নত বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলা। তাদের তাই যুগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্বমানের জ্ঞান-প্রযুক্তি ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভালো শিক্ষার পাশাপাশি তাদের ভালো মানুষ হতে হবে। সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও জনদরদি পরিপূর্ণ মানুষ সৃষ্টি করতে চাই।

প্রধান বক্তা হিসেবে ঢাকা-১১ আসনের সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মোহাম্মদপুর একটি শিক্ষাবান্ধব এলাকা। এখানে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের নিয়োগ সম্পন্ন হয়।

গোলাম সারওয়ার বলেন, রজতজয়ন্তীর আনন্দঘন আয়োজনের আন্তরিক উষ্ণতা শীতের সব কষ্ট মুছে দিয়েছে। কলেজের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন— এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমরা স্বাধীনতার সংগ্রামে জয়লাভ করলেও এখনও মুক্তির সংগ্রামে জয় আসেনি। তাই আমাদের দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সোহরাব হোসাইন বলেন, আসন্ন পাবলিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নিতে কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। পরীক্ষার হলে কাউকে স্মার্টফোন নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

ঢাকা স্টেট কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাব্বির নেওয়াজের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা, কলেজের অধ্যক্ষ দিলওয়ারা ইসলাম, রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিয়া প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনছার আলী খান।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী কলেজের ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন। অপরাহ্নে অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ, ফ্যাশন শো, তারার মেলা ও কনসার্ট। কনসার্টে গান পরিবেশন করেন ‘ক্লোজ আপ ওয়ান’ ও ‘পাওয়ার ভয়েজে’র তারকারা।